প্রায় দেড় দশক পর ভয় শঙ্কা কাটিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরেছেন আব্বাস উদ্দীন। ২০০৪ সালে সাতকানিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি থাকার পর থেকে মামলা-হামলার পাশাপাশি পিছু ছাড়েনি গ্রেপ্তার শঙ্কা। গত দেড় দশক ধরে মাঝেমধ্যে সাতকানিয়া পৌরসভার নিজ বাড়িতে গেলেও চুপিসারে রাতে গিয়ে ফিরেছেন ফের অন্যদিন রাতে। তবে এবার সব ভয় শঙ্কা কাটিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে নিজ বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরেছেন দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ-সম্পাদক আব্বাস। শুধু সাতকানিয়ার আব্বাস উদ্দীন নয়, চট্টগ্রামের হাজার হাজার বিএনপি নেতা-কর্মীদের চিত্র এটি।
আব্বাস উদ্দীন বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে শান্তিতে বাড়িতে থাকতে পারিনি। কোনো আচার অনুষ্ঠানে ও বাড়িতে উপস্থিত হতে পারিনি। শহরে ১৫ বছর যাযাবরের মতো জীবনযাপন করেছি। মামলা, হামলার পাশাপাশি আশঙ্কা ছিল বাড়িতে আক্রমণের। যার কারণে শহর থেকে রাতে বাড়িতে এলেও শুক্রবার বা শনিবার রাতে ফের ফিরে যেতাম। তবে এখন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। এই পতনের মাধ্যমে দেড় যুগ ধরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের যে ছন্নছাড়া জীবন তার অবসান হয়েছে আমার মতো লাখ লাখ বিএনপি নেতা-কর্মীর।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ থেকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়েছে। গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী এবং দেশের আপামর জনসাধারণ হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার, গুম খুনের শিকার হয়েছে। নেতাকর্মীরা আদালত পাড়ায় হাজিরা দিতে দিতে ক্লান্ত। আত্মগোপন, আত্মীয় স্বজনের বাসায় থাকতে থাকতে অনেকের জীবন, সংসার পরিবার তছনছ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে নতুন এই দেশে মানুষ এখন মুক্ত আকাশে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছেন তারা। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দোসররা দেশকে একটি তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করে পালিয়ে গেছে। ফ্যাসিস্টদের বিদায়ের মাধ্যমে দেশে নতুন যে সূর্যের উদয় হয়েছে তা অক্ষুন্ন রাখতে সবাইকে দলমত নির্বিশেষে শান্ত, সুশৃঙ্খল এবং দেশের সম্পদ যেন কোনভাবেই ক্ষতি না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।’
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা পালানোর পর থেকে মানুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে নেমে আনন্দ উল্লাসে মেতেছেন। সবার চোখে মুখে ছিল আনন্দ অশ্রু আর শেখ হাসিনার প্রতি জমা দেড় দশকের ক্ষোভ। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দিনব্যাপী আনন্দ মিছিল করেছে। পাশাপাশি বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও আনন্দ উদযাপন করেছে মিষ্টি বিতরণ করে।
সোমবার ও মঙ্গলবার বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল করেছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, আবুল হাশেম বক্কর, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, মোশারফ হোসেন দীপ্তি, গাজী সিরাজ উল্লাহ নেতাদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি আনন্দ মিছিল হয়েছে।