রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন থানা চলছে অ্যানালগ পদ্ধতিতে। থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি), অভিযোগ বা মামলা অ্যানালগ পদ্ধতিতে নেওয়া হচ্ছে। তদন্ত বা অনুসন্ধান করা হচ্ছে না। তবে ভুক্তভোগীরা আসতে শুরু করায় থানার পরিবেশ দিন দিন স্বাভাবিক হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা তাদের অভিযোগ বলছেন আর পুলিশ সেগুলো রেকর্ড করছে। পুলিশ বলছে, সবকিছুর এখন রেকর্ড রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে সার্বিক কার্যক্রম শুরু করা হবে। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশে বিভিন্ন থানায় অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় থানা ও ফাঁড়ি থেকে অস্ত্র এবং গুলি লুট করা হয়। গতকাল পর্যন্ত লুট হওয়া ৪০৬টি অস্ত্র এবং ৬ হাজার ২৫৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। থানাগুলোতে নেই চেয়ার-টেবিল, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট সংযোগ। অ্যানালগ পদ্বতিতেই চলছে জিডি-মামলার কার্যক্রম। থানার অধিকাংশ গাড়ি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়ায় সেবা দিতে পারছে না পুলিশ। এমন নানা সমস্যা আর সীমাবদ্ধতা নিয়ে চালু হয়েছে ঢাকা মহানগরের বেশির ভাগ থানার কার্যক্রম। এর পরও সাধারণ মানুষকে সেবা দেওয়ার দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজে ফিরেছেন পুলিশ সদস্যরা। সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা আর সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় পুলিশ সব সময়ই রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বাধাপ্রাপ্ত হয় এই বাহিনীর স্বাভাবিক কার্যক্রম। ৫ আগস্টের পর সপ্তাহখানেক বিরতি দিয়ে আবারও নিজ কর্মস্থলে ফিরেছেন পুলিশ সদস্যরা। সেনাসদস্যদের পাহারায় সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে থানার কার্যক্রম। এলাকাবাসী বলছেন, থানায় কোনো পুলিশ ছিল না, প্রয়োজনীয় আসবাব বা কাগজপত্র কিছুই ছিল না। ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে এখন আস্তে আস্তে সব গোছানো হচ্ছে। পোশাক পরেও তারা এখন বাইরে বের হচ্ছেন। দেশ চালাতে গেলে অবশ্যই পুলিশ প্রয়োজন। পুলিশ ছাড়া এক দিনও চলা যাবে না। পুলিশ সদস্যরা বলছেন, চেয়ার-টেবিল দিয়ে হাতে-কলমে অ্যানালগ পদ্ধতিতে চালু হয়েছে জিডি-মামলার কার্যক্রম। পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ। আমরা সবাই মিলে একত্রে কাজ করলে দ্রুতই সব স্বাভাবিক হবে। বর্তমানে সব থানার নিরাপত্তায় রয়েছেন সেনাসদস্যরা। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, সারা দেশ থেকে সম্প্রতি লুণ্ঠিত বিভিন্ন ধরনের ৩০৯টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬ হাজার ২৫৮ রাউন্ড গুলি, ৩১৮টি টিয়ার গ্যাস শেল, ২টি টিয়ার গ্যাস গ্রেনেড এবং ৯টি সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার চলছে। কারও কাছে অবৈধ অস্ত্র থাকলে নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ছাড়া র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, পুলিশের লুট হওয়া ৯৭ অস্ত্র, ৬ হাজার ৫৮৫ গোলাবারুদ, ২৮ ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে র্যাব। গত ৫ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে থানা, ফাঁড়ি ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের ঘটনা ঘটে। এদিকে সারা দেশে ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৬৩৪টির কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
এ ছাড়া ১১০টি মেট্রোপলিটন থানার মধ্যে ১১০টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৫২৪টির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি ৫টি থানার কার্যক্রম শিগগিরই শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।