সিলেটের বিছনাকান্দি কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে লুট করা প্রায় আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করেছিল টাস্কফোর্স। প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের এ পাথর রাখা হয়েছিল দুই ইউপি সদস্যের জিম্মায়। পাথর নিলামে বিক্রির জন্য দরপত্রও আহ্বান করেছিল খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। কিন্তু জব্দ করা পাথর আগেই লুট হয়ে যাওয়ায় দরপত্রে অংশ নেয়নি কেউ। পাথর লুটের পর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে মামলা দায়েরের।
জানা গেছে, সিলেটের বিছনাকান্দি কোয়ারি থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিপুল পরিমাণ পাথর লুট করে এলাকার বিভিন্ন বাড়ির আঙিনা ও সড়কের পাশে মজুত করে রাখেন। খবর পেয়ে গত ৩ নভেম্বর উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স বিছনাকান্দি ও আনফরেরভাঙা নামক এলাকাসহ হাদারপার ও বিছনাকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৮০৯ ঘনফুট পাথর জব্দ করে। জব্দ করা পাথর হাদারপার ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন ও বিছনাকান্দি ইউপি সদস্য পাপলু মিয়ার জিম্মায় রাখা হয়। জব্দ পাথর নিলামের জন্য গত ২০ ডিসেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) থেকে ১ হতে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দরপত্র ক্রয় ও ৮ জানুয়ারি জমাদানের শেষ তারিখ ধার্য করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত তারিখের মধ্যে কেউ দরপত্র জমা দেয়নি।
সূত্র জানায়, দুই ইউপি সদস্যের জিম্মায় থাকাবস্থায় প্রকাশ্যে পাথর লুট শুরু হয়। পাথর দিয়ে ট্রাকভর্তি করে ওপরে বালুর আস্তরণ দিয়ে চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়। চুরি ঠেকাতে থানা পুলিশ কিংবা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পাথর লুট প্রায় শেষ হওয়ার পর দুই ইউপি সদস্যকে দিয়ে মামলা করানোর উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। ইউএনওর দায়িত্বে থাকা এসিল্যান্ড দুই ইউপি সদস্য বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়েরের কথা বললেও গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমদ জানিয়েছেন, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে জিম্মাদার দুই ইউপি সদস্য, পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজনের ছত্রছায়ায় প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের এ পাথর লুট হয়েছে।
হাদারপার ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন জানান, তার জিম্মায় ৭৮ হাজার ঘনফুট পাথর ছিল। পাথর চুরি ঠেকাতে না পেরে তিনি ২ জানুয়ারি জিম্মাদারি থেকে অব্যাহতি নিতে আবেদন করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় তিনি এসিল্যান্ডকে চুরি ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চুরির ঘটনায় গত ৯ জানুয়ারি তিনি থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেছেন বলে দাবি করলেও পুলিশ তা অস্বীকার করে। ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন জানান, তার জিম্মায় থাকা পাথরগুলোর মধ্যে ৪-৫ হাজার ঘনফুট অবশিষ্ট রয়েছে। বাকি পাথর চুরি হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে জানতে অপর জিম্মাদার বিছনাকান্দি ইউপি সদস্য পাপলু মিয়াকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ সরকার তোফায়েল জানান, চুরির ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। পাথর চুরির বিষয়টি পুলিশ জানত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, পুলিশ আগে অবগত হলেও বিশাল একটি এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাথরগুলো জব্দ করে রাখা হয়েছিল। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে এগুলো পাহারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাটের সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইদুল ইসলাম জানান, জব্দ করা পাথর নিলামের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলেও কেউ অংশ নেয়নি। পাথর চুরির খবর পেয়ে বিএমডিকে জানানো হয়েছে।