চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। যেটিকে মূল্যায়ন করা হয় বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রায় কোটি মানুষের সরকারি নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হিসেবে। অথচ এই হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অনেকগুলোই বিকল। হাসপাতালটিতে এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) মেশিন আছে দুটি। যার একটি নষ্ট প্রায় পাঁচ বছর ধরে। অন্যটিরও একই অবস্থা। একইভাবে সিটি স্ক্যান মেশিনও নষ্ট গত চার বছর।
শুধু চমেক নয়। চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবার আরেকটি বড় কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাালটিতেও এমআরআই মেশিন রয়েছে একটি। সেটিও নষ্ট প্রায় দশ বছর ধরে। এখানকার আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটিও নষ্ট এক মাস ধরে। নিয়মিতই সংকট থাকে এক্স-রে মেশিনের ফিল্মের। মেশিনের অভিন্ন অবস্থা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোরও।
চমেক হাসপাতালে বর্তমানে শয্যাসংখ্যা ২ হাজার ২০০টি। এখানে চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসা ব্যক্তিদের অধিকাংশই নিম্ন, স্বল্প ও মধ্যম আয়ের। এখানে অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগ মিলে প্রতিদিন রোগী থাকে সাড়ে আট হাজারের বেশি। পক্ষান্তরে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন সেবা নেন ৫০০ রোগী। এ হাসপাতালেও অধিকাংশ রোগীই গরিব-অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলীম উদ্দিন বলেন, হাসপাতালের বিভিন্ন চিকিৎসা উপকরণ নষ্ট হওয়া আবার মেরামত করা এটি একটি চলমান কাজ। নষ্ট হলে আবারও মেরামত করা হচ্ছে। তবে এমআরআই মেশিনের বিষয়টি ভিন্ন। দীর্ঘ দিন ধরে এটি নিয়ে চিঠি চালাচালির পরও কোনো সমাধান হয়নি।
জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি চট্টগ্রামের সদস্যসচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি হাসপাতালগুলোর যন্ত্রপাতি মেরামত করে চিকিৎসা উপযোগী করা উচিত। কারণ সরকারি হাসপাতালের অধিকাংশ রোগীই অসহায়। তারা সরকারি হাসপাতালের ওপরই নির্ভরশীল।
জানা যায়, চমেক হাসপাতালের এমআরআই মেশিনগুলো কেনা হয়েছিল ১৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা দিয়ে। এর মধ্যে একটি ২০১৭ সালে ৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় কেনা হয়েছিল। ২০২১ সাল থেকে এটি বিকল পড়ে আছে। চমেক হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০টি এমআরআই হতো। খরচ হতো তিন থেকে চার হাজার টাকা। বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে এটি করতে হয় ৭ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
অন্যদিকে হাসপাতালে দুটি এনজিওগ্রাম মেশিন আছে। এর মধ্যে ২০১৪ সাল থেকেই একটি অচল, অপরটিও কখনো সচল, কখনো অচল।
অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালের এমআরআই মেশিনটি নষ্ট প্রায় দশ বছর ধরে। ২০১৫ সালে ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কেনা হয়েছিল মেশিনটি। তা ছাড়া হাসপাতালে পড়ে আছে চোখের রোগ নির্ণয়ের একটি দামি মেশিন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও আছে অচল ও নষ্ট মেশিন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের প্রাথমিক অবস্থায়ও জেলা হাসপাতালে চলে আসতে হয়। রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ ও পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন নষ্ট। মিরসরাইতে থাকলেও এটি অচল, মেরামত করতে হবে। সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যানেসথেসিয়া মেশিন অচল।