প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ নারী ও কিশোরীদের ওপর অসম প্রভাব ফেলে। ৬১ শতাংশ নারীর মতে, আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা পর্যাপ্ত নয়, ৪৯ শতাংশের মতে সেখানে স্যানিটেশন ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। এতে বিশেষভাবে গর্ভবতী নারী, বয়স্ক মানুষ ও শিশু-কিশোরীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে সম্পদের ঘাটতি সামাজিক জটিলতা নারী-কিশোরীদের আরও বিপন্ন করে তোলে। গতকাল ‘উপকূলীয় এলাকার নারী ও মেয়েদের দুর্যোগ বিপদাপন্নতা বিষয়ে গবেষণা’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। দক্ষিণাঞ্চলের শিশু পরিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা জেজেএস ও শাপলা নীড়ের উদ্যোগে এই গবেষণা করা হয়। গবেষণায় বলা হয়, দুর্যোগে নারীরা নির্দিষ্ট কিছু দুর্দশার সম্মুখীন হয়। আশ্রয় কেন্দ্রেও যৌন হয়রানির মুখে পড়ে অনেকে। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে নারীর প্রতি সহিংসতার প্রবণতা বাড়ায়, শিক্ষা প্রাপ্তির সুযোগ কমায় ও দুর্যোগের সময় মানবিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। গবেষণা দলের প্রধান ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে সম্পদের ঘাটতি ও সামাজিক জটিলতা নারী-কিশোরীদের আরও বিপন্ন করে তোলে। দারিদ্রতা বেড়ে যায় ও নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
গবেষণায় সংকট নিরসনে ১১ দফা সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। এসব সুপারিশের মধ্যে আছে- আশ্রয় কেন্দ্রে নারীদের জন্য আলাদা স্যানিটেশন ও বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকা, ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে নারীদের নেতৃত্বে দল গঠন করে দুর্যোগব্যবস্থাপনায় তাদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করা প্রভৃতি।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ তৈরি, প্রশিক্ষণ, মার্কেট লিংকেজ ও স্থায়ী সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্যোগগুলো টেকসই করার দাবি জানানো হয়।
এ ছাড়া সুপেয় পানির উৎস স্থাপন, বন্যা সহনশীল টয়লেট গড়ে তোলা, ঘূর্ণিঝড়ের সময় গর্ভবতী ও অসুস্থদের চিকিৎসায় স্পিডবোট অ্যাম্বুলেন্স, প্রশিক্ষিত নারী স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ‘ইমার্জেন্সি মেডিকেল ফান্ড’ গঠন, নারীদের নেতৃত্বে আশ্রয় কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করার দাবি জানানো হয়। বক্তারা বলেন, নারীদের অভিজ্ঞতা ও চাহিদা যেন জাতীয় পরিকল্পনায় যুক্ত হলে ভবিষ্যতে দুর্যোগেও নারীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।