বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে গতকাল ‘সশস্ত্র প্রতিরোধ ও নারী নেতৃত্ব : প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও তাঁর সময়কাল’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় জাদুঘর। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশা ইসলাম নাঈম। আলোচক ছিলেন সাংস্কৃতিক কর্মী কুমার প্রীতিস বর। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. ফরহাদ সিদ্দিক।
প্রবন্ধকার বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি বিপ্লবী, অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের বর্তমান পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৮ সালে সাত বছর বয়সে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯৩০ সালে কলকাতার বেথুন কলেজে পড়ার সময় রাজনীতিতে প্রীতিলতা প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ শুরু করেন এবং বিভিন্ন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন। বাঙালি নারীকে তিনি শিখিয়েছিলেন নারীরাও দেশের জন্য লড়াই করতে পারে। বাঙালি নারীদের অসীম সাহসিকতা, দেশপ্রেম, আদর্শ আর বিপ্লবের কথা উঠলে সবার আগে যে নামটা আসে তিনি হলেন প্রীতিলতা।
তিনিই প্রথম বাঙালি নারী, যিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ব্রিটিশদের প্রমোদ কেন্দ্র চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাবে ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বিপ্লবীরা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি হুইসেল বাজিয়ে আক্রমণ শুরুর নির্দেশ দিলে গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ক্লাব কেঁপে উঠেছিল। ব্রিটিশদের পাল্টা আক্রমণে তাঁর বাঁ-পাশে গুলি লাগে। আক্রমণ শেষ হলে বিপ্লবী দলটির সঙ্গে তিনি কিছুদূর এগিয়ে আসেন। আহত অবস্থায় তাঁর ধরা পড়ার আশঙ্কা দেখা দিলে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মাত্র একুশ বছর বয়সে নিজের মাতৃভূমির জন্য জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। অসাধারণ সাহসী নারীকে মানুষ আজও পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করে।