বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘আগামী মাসে রিজার্ভ ২৭ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার হবে। রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যার জন্য সময় প্রয়োজন।’ গতকাল রাজধানীর হোটেল আমারিতে ‘বাংলাদেশে আর্থিক উন্নয়নের ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক প্রবণতা’ শীর্ষক একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সবাইকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে ব্যাংকিং খাতকে শক্তিশালী করার ওপরও জোর দেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই গবেষণার আলোকে সরকারকে তার নীতিমালা পুনর্বিন্যাস করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর কৌশল নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যাংক শাখা রয়েছে বাংলাদেশে, তাই এখন আর নতুন শাখা খোলার দিকে মনোযোগ না দিয়ে মূল লক্ষ্য হলো- বিদ্যমান শাখাগুলোর কার্যকারিতা বাড়ানো।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টারের (আইজিসি) সহযোগিতায় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) পরিচালিত গবেষণা ফলাফল তুলে ধরেন পিআরআই-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান।
তিনি বলেন, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যত ঋণ বিতরণ করেছে তার ৭৫ শতাংশই নিয়েছেন ১ শতাংশ গ্রহীতা। ঋণের ৭৮ শতাংশই কেন্দ্রীভূত ঢাকা ও চট্টগ্রামে। গত এক দশকে ব্যাংক সম্প্রসারণ সত্ত্বেও, বেসরকারি ব্যাংকগুলো ধনী পূর্বাঞ্চলে ঘনীভূত রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে তারা দেশের দরিদ্র অঞ্চলে পৌঁছাচ্ছে না বা সেবা দিচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতিগত প্রমাণ থেকে বোঝা যায় যে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো গরিবদের জন্য ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এই গবেষণা সেইসব অঞ্চল চিহ্নিত করেছে যেখানে আর্থিক সেবা এখনো অসম। আমাদের এখন নিশ্চিত করতে হবে যেন কোনো জেলা বা সম্প্রদায় পিছিয়ে না থাকে।’
সভাপতির বক্তব্যে পিআরআই-এর চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার বলেন, ‘এই গবেষণা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নের একটি স্থানিক ও কালানুক্রমিক চিত্র উপস্থাপন করেছে, যা জাতীয় গড়ের আড়ালে থাকা গভীর আর্থিক বৈষম্যকে স্পষ্টভাবে উন্মোচন করেছে। আমাদের বুঝতে হবে, প্রকৃত অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক উন্নয়নের জন্য প্রথমেই চিহ্নিত করতে হবে দেশের কোন কোন অঞ্চল ও জনগোষ্ঠী মূলধারার ব্যাংকিং সেবা থেকে বাদ পড়ে আছে।’
প্যানেল আলোচকদের মধ্যে ছিলেন আইজিসির বাংলাদেশের সিনিয়র উপদেষ্টা ড. নাসিরুদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (পরিসংখ্যান) মো. আনিস উর রহমান। তারা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো পরিমার্জন এবং তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি উন্নত করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।