কাস্টম কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। গতকাল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন কার্যত বন্ধ ছিল। এর প্রভাব পড়ে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে। কর্মবিরতির কারণে ব্যবসায়ীরা বন্দর থেকে সময়মতো পণ্য ডেলিভারি নিতে পারছেন না। এদিকে ডেলিভারি কমে যাওয়ায় বন্দরের ভিতরে বড় ধরনের কনটেইনার জটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বন্দর ও কাস্টম সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে দুই ভাগ করে অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে গত শনিবার থেকে প্রতিদিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছেন দেশের সবচেয়ে বেশি শুল্ক আদায়কারী স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। এর আগে ১৫ মে হতে পাঁচ দিন আংশিক কলমবিরতি পালন করা হয়েছিল। প্রথম দফা কর্মসূচির ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন কর্মসূচি দেওয়ায় বিপাকে আমদানি-রপ্তানিকারকরা। বিকাল ৫টার পর থেকে দুই ঘণ্টার জন্য শুল্কায়ন কাজ চললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে ব্যবসায়ীরা জানান। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব (ভারপ্রাপ্ত) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, কনটেইনার ডেলিভারি কিছুটা কমেছে। তবে বন্দরের ভিতরে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে। কাস্টম হাউসে কর্মবিরতি দীর্ঘায়িত হলে পণ্য খালাসও ব্যাহত হতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের সমুদ্রকেন্দ্রিক আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশ হয়ে থাকে। তাই এ বন্দরের কাজকর্ম ব্যাহত হওয়ায় দেশের অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম। তিনি বলেন, রবিবার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে আমদানি সংক্রান্ত শুল্কায়ন কার্যত বন্ধ ছিল। রপ্তানি শুল্কায়নও কম হয়েছে। এতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। কাস্টম কাজ না করায় বন্দর থেকে বাইরে পণ্য ডেলিভারি মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার এনবিআর নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারবে। সেটি না হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কাস্টম কর্মকর্তাদের আন্দোলন সামনে নাকি আরও কঠোর হবে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানান, এর আগে কাস্টমসে কলমবিরতি এবং প্রাইম মুভার ট্রেইলার (কনটেইনার বহনকারী লং ভেহিকেল) ধর্মঘটের কারণে বন্দরে বিপুল পরিমাণ কনটেইনার জমে যায়। বন্দরে গতকালের রিপোর্ট অনুযায়ী কনটেইনারের সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ৩১৫ টিইইউএস (২০ ফুট সমমান)। ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস হলেও কনটেইনার চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ৩০ শতাংশ স্থান ফাঁকা রাখতে হয়। অর্থাৎ এখনই জট তৈরি হয়েছে। কাস্টম কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকলে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।