উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহকারীরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে। চলতি মৌসুমে তিনটি জো (অমাবস্যা) চলে গেলেও মা মাছ ডিম দেওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা এখন নৌকা, বাঁশের ভেলা, বালতি ও প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন। জানা যায়, গত বছরের ৭ মে হালদা নদীর রাউজান অংশের মইশকরম এলাকার চইল্যাখালি এবং ২৯ মে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে মা মাছ মাত্র এক হাজার ৬৮০ কেজি ডিম ছাড়ে, পোনা তৈরি হয় মাত্র ৪৬ কেজি। এরই মধ্যে চলতি মৌসুমের এপ্রিল মাসের দুটি ও মে মাসের একটি জো শেষ। ২৩ থেকে ২৯ মে চলছে চলতি মাসের দ্বিতীয় জো। এরপর আগামী জুন মাসে ৮ থেকে ১৪ জুন এবং ২১ থেকে ২৭ জুন আছে পরবর্তী জো। প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন মাসের পূর্ণ অমাবস্যার সময় হালদা নদীর কার্প জাতীয় রুই মা মাছ প্রাকৃতিক নিয়মে ডিম ছাড়ে।
প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, হালদা নদীর মাছুয়াঘোনা, গড়দুয়ারা নয়াহাট, রামদাশহাট, মদুনাঘাট, নাপিতের ঘাটা, আজিমের ঘাট, পোড় আওলিয়া টেক, কাটাখালির মুখ, বোবাইয়ার চর, গড়দুয়ারা নয়াহাট কেরাংতলি বাঁক এলাকায় ডিম সংগ্রহকারীরা মা মাছের ডিম সংগ্রহে প্রস্তুত। এখন বৃষ্টির অপেক্ষায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, তিনটি জো চলে গেছে। এখনো নমুনা বা মূল ডিম ছাড়েনি। এখন সবাই বৃষ্টির অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, গত বছর দুই দফায় নমুনা ডিম ছাড়ে। এর আগে ২০১৬ সালেও নমুনা ডিম ছেড়েছিল। এটা হালদা নদীর জন্য অ্যালার্মিং। এবারও গত বছরের মতো হলে তা হবে প্রাকৃতিক এই নদীটির জন্য বিপর্যয়। তবুও আমরা আশাবাদী।
চবি হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরই এ নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করা হয়। ২০২৩ সালে সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৫ হাজার কেজি। ২০২২ সালে সংগ্রহ করা হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি, ২০২১ সালে সাড়ে ৮ হাজার কেজি, ২০২০ সালে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি, ২০১৯ সালে প্রায় ৭ হাজার কেজি, ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নানাভাবে দূষণ হচ্ছে হালদার পানি। শাখা খালগুলো হয়ে সরাসরি তরল বর্জ্য ও দূষিত পানি পড়ছে এ নদীতে। কৃষি জমির কীটনাশকের পানিও পড়ছে হালদায়। মুরগি ও গবাদি পশুর ফার্মের বর্জ্য, ছোট-বড় বিভিন্ন শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যও শাখা খাল হয়ে পড়ছে হালদায়। ফলে দূষণ হচ্ছে নদীটি।