প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়, বেসরকারি বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অতি উচ্চাকাক্ষী। কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়াতে কর কাঠামোয় প্রয়োজনীয় সংস্কার দেখা যায়নি। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আগের সরকারের মতো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত বাজেট উত্তর আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।
মূল প্রবন্ধে ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, বাজেটে বিনিয়োগ কর্মসংস্থান ও সংস্কারের দিকনির্দেশনা দেখা যায়নি। রাজস্ব আয়, বেসরকারি বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন ধরা হয়েছে তা অতি উচ্চাকাক্ষী। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হয়েছে। এটা উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
তবে এই উদ্যোগ এখনই উপযুক্ত সময় নয়। বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। গ্রামীণ নারীর কর্মসংস্থানে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অ্যামচেমের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ বলেন, কর কাঠামো উন্নয়নের চেষ্টা আছে? বাজেটে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে না পারলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। কাস্টমস ক্লিয়ারিং আরেকটি সমস্যা। এখনো মালামাল খালাস করতে গেলে ১৭ জায়গায় স্বাক্ষর লাগে। লজিস্টিক খাতের ও উন্নয়নের প্রয়োজন আছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাজেটের রাজস্ব আয়েয় যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তা বাস্তবভিত্তিক নয়। ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে এনবিআর কখনোই এত বিশাল লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। ফাঁকি ও এড়িয়ে যাওয়া বন্ধ করার মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব। মূল্যস্ফীতি যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে তা নিয়েও সন্দেহ আছে। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সীমিত সম্পদ নিয়ে আনলিমিটেড চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। তারপরও বাজেটে চেষ্টা করেছে সরকার। তবে সামাজিক অবকাঠামো খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়নি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন ছিল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ঐতিহাসিকভাবে আমরা বিচক্ষণতার সঙ্গে অর্থ ব্যয় করতে পারিনি। এটাই বড় সমস্যা। আগের সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলো সঠিক ছিল না, প্রকল্প বাস্তবায়ন সঠিক ছিল না। দুর্ভাগ্যবশত এই দেশে এমন কোনো জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে ব্যবসায়ের কোনো দুঃখজনক ব্যয় নেই। তিনি আরও বলেন, যে কোনো সংস্কারে বিজয়ী এবং পরাজিত হবে। যারা বিদ্যমান ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হয়েছে, তারা সংস্কার গ্রহণ করে, পরাজিতরা সর্বদা বর্জন করে। সরকারের সংস্কার কাজ চলমান। তবে তা ধীর গতিতে। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, সংস্কারের কোনো টেক্সট বুক ম্যানুয়াল নেই যে, কোনটা আগে করতে হবে, কোনটা পরে। ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে ন্যাশনাল সিগন্যাল উইন্ডোর মতো সংস্কার কাজগুলো চলমান আছে।