২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে খুলনায় হঠাৎ করেই নারী ও শিশু সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। খুলনা ব্লাস্টের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ৫ শতাধিক নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে চলতি ২০২৫ সালে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত আড়াই শর বেশি সহিংসতার ঘটনার রেকর্ড রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, আর্থিক সংকট, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
৮ জুন রাত দেড়টার দিকে রূপসার জয়পুর এলাকায় ২৩ বছরের তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে তরুণীর স্বামী মো. সোহেলকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারপিট করে বখাটেরা। তরুণী তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে তারা টাকা দাবি করে। পরে টাকা আনতে তরুণীর বাড়িতে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। পুলিশ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ৭ জুন রাতে রূপসার আইচগাতী শ্বশুরবাড়িতে খুন হন সুমাইয়া খাতুন (২৩)। তিনি প্রবাসী শাওন শেখের স্ত্রী। রূপসা থানার ওসি মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান জানান, গভীর রাতে কে বা কারা গলায় গামছা পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে।
খুলনা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে খুলনায় ১৩ জনকে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এ সময় হত্যাসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২৩টি। খুলনা ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট ফাতেমা খন্দকার রীমা জানান, গত ছয় মাসে পারিবারিক সহিংসতা, যৌতুক, ধর্ষণের ঘটনায় আড়াই শর বেশি অভিযোগ লিপিবদ্ধ হয়। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, গ্রাম আদালত-পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা পার পাচ্ছে।
৯ জুন নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় ফ্যানের হুকের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে খুবি আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মাহফুজা আফরিন উপমা (২৩) আত্মহত্যা করেন। ৭ মে নগরীর লবণচরায় মারধর করে জান্নাতি আক্তারকে (২০) হত্যা করা হয়। পুলিশ তার স্বামী আবু সালেহকে গ্রেপ্তার করে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী মোমিনুল ইসলাম জানান, আদালতে মামলাজটের কারণে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তুলছে। জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শেখ ইমরান বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা থানায় দায়ের হলে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শেষ করে ও আসামিদের গ্রেপ্তার করে। পুলিশ এ ধরনের অপরাধ তৎপরতা বন্ধে সক্রিয় রয়েছে।