রাজশাহী বিভাগে বাড়ছে মাছ চাষ। এ অঞ্চলের মাছে স্বাদ বেশি হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি। তবে এ মাছের বেশির ভাগ রেণুর জোগান হয় রাজশাহীর মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এ রেণুর দাম সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ নেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁর নিয়ামতপুর থেকে রেণু কিনতে এসেছেন মাছ চাষি জিয়াউল হক। তিনি রুই, কাতলা, মৃগেল ও সিলভার কার্পের রেণু কিনেছেন। প্রতি কেজি রুই ও কাতলা ৪ হাজার এবং মৃগেল ও সিলভার কার্প ৩ হাজার টাকায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে আসা মাছ চাষি জয়নাল আবেদিন রুই, মৃগেল ও বাটা মাছের রেণু কিনেছেন প্রতি কেজি ৪ হাজার টাকা দরে।
রাজশাহীর মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে প্রতিদিনই আসছেন উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে মাছ চাষিরা। তবে তাঁদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের দ্বিগুণ। দেওয়া হচ্ছে না পোনা কেনার রসিদ। চিরকুট ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাদের। তাতে পরিমাণ লেখা থাকলেও নেই পোনার দাম। মাছ চাষি জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘বছরের পর বছর এখান থেকে পোনা নিচ্ছি। কিন্তু কখনো সরকার নির্ধারিত দামের তালিকা দেখিনি বা সরকারি রসিদ পাইনি।’ রাজশাহীর দারুশা এলাকার মাছ চাষি বাবু জানান, সরকারি দাম কত তা কোথাও লেখা নেই। তাদের বলাও হয় না। দাম জিজ্ঞেস করলে পোনা দিতে চায় না। তিনি বলেন, ‘সাদা কাগজে হাতে লেখা একটা চিরকুট দিয়েছিল, পোনা নেওয়ার পর সেটা রেখে দিয়েছে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি কেজি রেণুর জন্য ১ হাজার ৭০০ টাকা। রাজশাহী মৎস্য ভবনের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা জানান, সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে দ্বিগুণ নেওয়া হয় চাষিদের কাছ থেকে। কেজি রুইয়ের রেণুর দাম নেওয়া হয় ৪ হাজার টাকা। আবার কার্প জাতীয় মাছের পোনার দর ৩ হাজার। সব পোনার দাম চাষিদের কাছ থেকে দ্বিগুণের বেশি নেওয়া হয়। সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বাড়তি যে দাম নেওয়া হয়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ দর নির্ধারণ করেন।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতি কেজি রেণুর সরকারি দর ১ হাজার ৭০০ টাকা। চাষির কাছ থেকে দাম দ্বিগুণ নেওয়া হচ্ছে জানালে তিনি বলেন, ‘সব তথ্যপ্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দিন। আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আমার জানা মতে এখানে অতিরিক্ত দাম নেওয়ার কথা না। সরকারি দর কত, তা ফরিদুল সাহেবের কাছে জেনে নিন।’
খামার ব্যবস্থাপক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘সবকিছু তালিকা দিয়ে চলে না। এটা আপনারাও বোঝেন, আমিও বুঝি। দাম সময় অনুযায়ী পরিবর্তন হয়।’