রাজশাহীতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম এবং স্বজনপ্রীতি অব্যাহত আছে। গরিব, দুস্থ, অসচ্ছল, প্রতিবন্ধী এবং দিনমজুর শ্রেণির নিম্ন আয়ের মানুষ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এদের পরিবর্তে চাকরিজীবী এবং সচ্ছল ব্যবসায়ীদের কার্ড দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চার দফা লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও মেলেনি প্রতিকার। সর্বশেষ যে ৪১ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তার মধ্যে আছেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বন্ধগেট এলাকার বিলসিমলার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম এবং সাইদুল ইসলাম। তাঁরা আপন ভাই। সাইফুলের আছে বড় মুদি দোকান। সাইদুল পুরোনো গাড়ি বেচাকেনার ব্যবসা করেন। দুই ভাইয়ের আছে তিন তলা বাড়ি। বাড়িটির দুটি ইউনিট ছাত্রাবাস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সচ্ছল পরিবার, অথচ সাইফুল এবং সাইদুলকে পাশাপাশি ক্রমিক নম্বরে (৮১৬৬০০৩০০০৩০৮ ও ৮১৬৬০০৩০০০৩০৯) টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হয়েছে। দুজনের কার্ডেই পেশা হিসেবে দিনমজুর উল্লেখ আছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) কিছু কর্মকর্তা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ আছে। এ ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এর আগে তিন দফা লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর আবার ৪১ জনকে তালিকাভুক্ত করেছে সিটি করপোরেশন। এ ঘটনায় ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার চতুর্থবার ওয়ার্ডের বাসিন্দারা তালিকা বাতিলের আবেদন জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে কার্ড দেওয়া হয়েছে কি না জানি না। তবে এক বড় ভাই আমার কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়েছিলেন।’ সাইদুল ইসলাম দিনমজুর নন নিজেই স্বীকার করে বলেন, ‘আমার ব্যবসার অবস্থা খুব একটা ভালো না। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। এ কারণে সংশ্লিষ্টদের বলে কার্ড করিয়েছি।’
একই মহল্লার বাসিন্দা আরেকজন সাইদুল ইসলাম চাকরিজীবী। তিনিও কার্ড (৮১৬৬০০৩০০০২৭৩) পেয়েছেন। তাঁরও বাড়ি আছে। দাসপুকুর এলাকার শফিকুল ইসলাম গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্সে কর্মকর্তা পদে চাকরি করেন। তাঁকেও দিনমজুর উল্লেখ করে কার্ড (৮১৬৬০০৩০০০১৮৮) দেওয়া হয়েছে। তাঁরও বাড়ি আছে। সচ্ছলরা যখন কার্ড পেয়েছেন তখন বঞ্চিত হয়েছেন অসচ্ছল আর প্রতিবন্ধীরা। দাসপুকুর এলাকার রাজীব। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এক চোখে দেখতে পান না। তিনি রংমিস্ত্রির কাজ করেন। রাজীব বলেন, ‘আমারও আগে কার্ড ছিল। নতুন তালিকায় আমার নাম নেই। কেন নেই জানি না।’ ডিঙাডোবা এলাকার বাসিন্দা বশির। সংবাদপত্র বিক্রি করেন। স্বল্প আয়ে কোনোরকমে সংসার চালান। বশির বলেন, ‘নতুন তালিকায় আমার স্থান নেই।’
কার্ডের তালিকা প্রণয়ন এবং বিতরণে স্বজনপ্রীতি ও অস্বচ্ছতার অভিযোগে ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সালমগীর হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন স্বপন রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ২৫ জুন, ৮ আগস্ট, ৪ সেপ্টেম্বর এবং সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর চার দফা লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তাঁরা প্রণীত কার্ডের তালিকা বাতিল করে নতুনভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে তালিকা প্রণয়নের দাবি জানান। রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।