৩ এপ্রিল, ২০২০ ১১:০৮

করোনা নিয়ে এখনও ধাঁধায় বিশেষজ্ঞরা

অনলাইন ডেস্ক

করোনা নিয়ে এখনও ধাঁধায় বিশেষজ্ঞরা

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংযোগে বা কাছাকাছি এলে ভাইরাসের অন্যের দেহে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা অন্যান্য শ্বাসনালি সংক্রমণের ভাইরাস বা ব্যাক্টিরিয়ার মতো এই ভাইরাস হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

সেই সূত্রে ভাইরাসের গতিবিধি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলছে না বলে জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। নিজেদের বক্তব্যের পক্ষে তারা কয়েকজনের সংক্রমণকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছেন।

করোনা সংক্রমণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রথম যার মৃত্যু হয়, তিনি ২ মার্চ বিলাসপুর থেকে কলকাতায় ফেরেন। ফেরার ন’দিনের মাথায় জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়। সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ মার্চ দক্ষিণ দমদমের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির দেহে করোনা ধরা পড়ে। হাসপাতালে ভর্তির আগে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে স্বামীকে নিয়ে যান তার স্ত্রী। ফলে ওই ব্যক্তির স্ত্রী, একই বাড়িতে বসবাসের সুবাদে আক্রান্তের ৭৯ বছরের মায়ের নামও ‘হাইরিস্ক ক্যাটেগরিতে’ চলে আসে। কিন্তু ওই দু’জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়েনি।


পঞ্চসায়রের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধ পরিবারের সঙ্গে একই গাড়িতে এগরা গিয়েছিলেন। আত্মীয়ের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বৃদ্ধ দম্পতি দিঘা ঘুরতে যান। এ ক্ষেত্রেও আক্রান্তের স্ত্রী, ছেলে, ছেলের স্ত্রী বা নাতনির নমুনা পরীক্ষায় এখনও করোনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার আত্মীয়ের স্ত্রী ও ফুফু আক্রান্ত হয়েছেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য, সূত্র মিলছে না! তাদের বক্তব্য, এগরার ঘটনায় কার থেকে কার দেহে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, সেটাই এখনও স্পষ্ট নয়।

মাইক্রোবায়োলজিস্ট পুরঞ্জয় সাহা জানান, মাত্র কয়েকটি ঘটনা নিরিখে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়। আরও ঘটনা বিশ্লেষণ করতে হবে। তার মতে, কার রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কতটা, কত মাত্রায় দেহে ভাইরাস ঢুকেছে— এই সবই বিশ্লেষণ করা জরুরি।

এপিডেমোলজিস্ট পূরণ শর্মা জানান, ‘‘নির্দেশিকা মেনে আক্রান্তের থেকে দূরত্ব বজায় রাখলে, মাস্ক পরলে, বার বার হাত ধুলে ভাইরাসের কোপে পড়ার আশঙ্কা কম। স্বজনেরা কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেন, তা দেখতে হবে।’’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, দক্ষিণ দমদমের ওই ব্যক্তির লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগে পর্যন্ত করোনা-সম্ভাবনা আন্দাজই করা যায়নি।

উত্তরবঙ্গের আক্রান্ত নারীর প্রসঙ্গে টেনে এক জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক জানান, ওই নারী চেন্নাই থেকে ফেরার পরে ভাইয়ের বাড়িতে ছিলেন। গত ২০ মার্চ তার শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়। এখনও পর্যন্ত ভাইয়ের মধ্যে কোনও করোনা-লক্ষণ নেই। 

পূরণ শর্মা জানান, ভুটানে আমেরিকা-ফেরত এক ব্যক্তি দেশে ফিরে করোনায় আক্রান্ত হন। তার স্ত্রী, চালক এবং টুর গাইড একই গাড়িতে ছিলেন। চালক এবং টুর গাইডের রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও ১৫ দিনের মাথায় স্ত্রীর লালারসের চতুর্থ নমুনা পরীক্ষায় কোভিড১৯ ধরা পড়ে! আগের তিন বার কিন্তু স্ত্রীরও পরীক্ষার রিপোর্ট চালক এবং টুর গাইডের মতোই নেগেটিভ এসেছিল। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সমর বিশ্বাস বলেন, ‘‘এখনও ছবিটা যে অস্পষ্ট, তা ঠিক। সকলেই সূত্র খোঁজার চেষ্টা করছি। বিপদ এড়াতে লকডাউনে বাড়ি থেকে বেরোনো উচিত নয়। সকলে মিলে না-লড়লে এই যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়।’’ সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর