রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার তিনজন এবং পৌরসভা এলাকার দুই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। শনিবার রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পরে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জরুরী সভা করে রাজবাড়ী জেলাকে লাকডাউন ঘোষণা করেন রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি দিলসাদ বেগম।
রাজবাড়ী পৌরসভার দুইজন এবং রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর, চন্দনী এবং বানিবহ ইউনিয়নে একজন করে তিন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে এক গৃহবধূ রয়েছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আক্রান্ত ব্যক্তির জামাই বলেন, আক্রান্ত (সাগর-ছদ্মনাম) (৭০) ২২দিন পূর্বে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় ছেলের বাসায় যান এবং সেখান থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত ৫ এপ্রিল (শনিবার) ঢাকা থেকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের কোলারহাট গ্রামে আরেক মেয়ের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় ঐ অসুস্থ ব্যক্তিকে। ঢাকা থেকেই তিনি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজবাড়ীতে আসনে বলেন স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। স্থানীয়দের অভিযোগে করেনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায় স্বাস্থ্য বিভাগ। এরপর গতকাল শনিবার করোনাভাইরাস ধরা পড়ে তার শরীরে। আক্রান্ত ব্যক্তি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে রয়েছে এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ী ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলাতে।
সদর উপজেলা বানিবহ ইউনিয়নের এক যুবক (২০) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে রাজবাড়ী আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি রয়েছে। তিনি কোনদিন বিদেশে যাননি বলে পরিবার ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। আক্রান্তের চাচা বানিবহ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. খোরদেশ আলম বলেন, আমার ভাতিজার শরীরে করোনার তেমন কোন উপসর্গ ছিলো না তবে সামান্য জ্বর আর কাশি ছিলো। স্বাস্থ্য বিভাগ নমুনা সংগ্রহ করে তার শরীরে করোনাভাইরাস পজেটিভ হয়। করোনাভাইরাস হলে যুবক কারো সংস্পর্শে এসে হয়েছে বলে তিনি জানান তবে তার বাড়ীর আশেপাশে কেউ বিদেশ থেকে আসেনি কিম্বা ঢাকা থেকে আসেনি।
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে সিঙ্গাপুর থেকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নে আসে আরেক যুবক (২৬)। ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে শেষে সুস্থ হয়ে স্থানীয়দের সাথে ঘুড়ে বেড়ায়। ৩ এপ্রিল (শুক্রবার) জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় বলে জানায় সিভিল সার্জন। চন্দনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে এম সিরাজুল আলম বলেন, বিদেশ থেকে আসার পর পুলিশ তাকে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করে এরপর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করার কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
রাজবাড়ী পৌরসভার বিনোদপুর এলাকার (উদ্দীন-৬৫) ছদ্মনাম) কোনদিন বিদেশে যাননি। ঢাকায় গিয়েছিলেন কয়েক বছর পূর্বে। রবিবার সকালে মোবাইল ফোনে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ১০/১২দিন পূর্বে জ্বর আসে। রাজবাড়ী সদর হাসাপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারে পরামর্শ নেই। ডাক্তার করোনাভাইরাস টেস্টের কথা বললে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নমুনা সংগ্রহ করে। গতকাল শনিবার জানতে পারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি। তিনি মোবাইলে দাবী করেন আমার মধ্যে করোনাভাইরাসের কোন উপসর্গ নেই। দ্বিতীয়বার টেস্ট করার অনুরোধ করেন আক্রান্ত এই রোগী।
রাজবাড়ী পৌরসভার বিনোদপুর এলাকার সুইপার রানী (৩৫)। তিনি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন। কারো সংস্পর্শে এসে তিনি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবী করেন তার পরিবার। তিনিও রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শনিবার রাতে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজবাড়ীতে ২৮জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এর মধ্যে ৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। পর্যাপ্ত টেস্ট করা হলে রাজবাড়ীতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দুই’শ হতে পারে। সংস্পর্শে আসার কারণে এই রোগ জেলার ছড়িয়েছে বলে তিনি জানান।
রবিবার সকালে রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিরা কারো না কারো সংস্পর্শে এসে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বৃদ্ধ ব্যক্তি ঢাকার থেকে করোনাভাইরাতে আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবাই ভালো আছে। রাজবাড়ীতেই এদের চিকিৎসা হবে। তবে প্রয়োজন মনে করলে দুই একজনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হতে পারে। রোগীদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হলে আরো অনেকের মধ্যে করোনাভাইরাস পজেটিভ হতে পারে বলে তিনি জানান।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন