৮ মে, ২০২১ ২১:৫৭

চীনের সিনোফার্মের টিকা কেন জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিল ডাব্লিউএইচও?

অনলাইন ডেস্ক

চীনের সিনোফার্মের টিকা কেন জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিল ডাব্লিউএইচও?

ফাইল ছবি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) জরুরি ভিত্তিতে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি সিনোফার্মের ভ্যাক্সিন অনুমোদন করেছে।

এটি পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে প্রথম কোন দেশের উদ্ভাবিত টিকা যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেল।

চীনে এবং অন্যান্য দেশে লাখ লাখ মানুষকে ইতোমধ্যেই এই টিকা দেয়া হয়েছে।

এ যাবৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুধু ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন অ্যান্ড জনসন এবং মর্ডানার ভ্যাক্সিনের অনুমোদন দিয়েছে।

তবে বিশেষ করে আফ্রিকা, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোর নিজস্ব স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের তাগিদে চীনা ভ্যাক্সিন অনুমোদন করেছে।

প্রথম দিকে, চীন তাদের কোভিড টিকাগুলো সম্পর্কে আন্তর্জাতিকভাবে খুবই কম তথ্য প্রকাশ করায় চীনা ভ্যাক্সিনগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে অনেকদিন থেকেই নিশ্চয়তার অভাব থেকে গেছে।

কিন্তু শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে সিনোফার্মের ভ্যাক্সিনের "নিরাপত্তা, কার্যকারিতা এবং মান" যাচাইয়ের পর তা তারা অনুমোদন করেছে। এই টিকা উদ্ভাবন করেছে বেইজিং ইনস্টিটিউট অফ বায়োলজিকাল প্রডাক্টস্।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অন্যান্য অনুমোদিত ভ্যাক্সিনের তালিকায় এখন সিনোফার্ম যুক্ত হবার পর "যেসব দেশ স্বাস্থ্য কর্মী এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে কোভিড-১৯এর টিকা পেতে চাইছে, তাদের জন্য ভ্যাক্সিন কর্মসূচি দ্রুত গতিশীল করার সম্ভাবনা তৈরি হল।"

সংস্থাটি ১৮ ও তার বেশি বয়সীদের দুই ডোজে এই ভ্যাক্সিন দেবার সুপারিশ করেছে।

আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চীনের তৈরি আরেকটি কোভিড ভ্যাক্সিন সিনোভ্যাককেও অনুমোদন দেয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রাশিয়ার তৈরি 'স্পুটনিক ভি' টিকা এখনও মূল্যায়নের পর্যায়ে রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমর্থন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বিশ্বে স্বাস্থ্য বিষয়ক শীর্ষ এই সংস্থার ছাড়পত্র জাতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর জন্য ভ্যাক্সিনের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা বিষয়ে একটা সবুজ সঙ্কেত হিসাবে কাজ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইয়েসুস বলেছেন এতে করে বিভিন্ন দেশের "নিজস্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো জাতীয় পর্যায়ে তাদের অনুমোদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে আস্থা পাবে।"

এর আরেকটি ইতিবাচক দিক হল বৈশ্বিক কোভ্যাক্স কর্মসূচিতে এখন এই ভ্যাক্সিনকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। ধনী ও দরিদ্র দেশগুলো যাতে ভ্যাক্সিন পাবার ব্যাপারে বৈষম্যের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে গত বছর এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।

চীনা ভ্যাক্সিনকে জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন দেবার এই সিদ্ধান্ত কোভ্যাক্স প্রকল্পকে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভ্যাক্সিন সরবরাহের ব্যাপারে এই প্রকল্প হিমশিম খাচ্ছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাবার আগে সিনোফার্মের টিকা বেশ ব্যাপকভাবেই ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছিল। আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী ইতোমধ্যেই ৬কোটি ৫০ লাখ ডোজ সিনোফার্ম টিকা মানুষের শরীরে দেয়া হয়ে গেছে।

চীন ছাড়া আর যেসব দেশে এই টিকা ব্যবহার করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান এবং হাঙ্গেরি।

জরুরি ব্যবহারের জন্য সিনোফার্মের অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরি উপদেষ্টা দল। তারা এই টিকার ক্লিনিক্যাল তথ্য-উপাত্ত এবং এটি তৈরির পদ্ধতিগত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্ত নেয়।

তারা জানায় কোভিড-১৯ এর উপসর্গ এবং হাসপাতালে ভর্তি হবার মত পরিস্থিতি ঠেকানোর ক্ষেত্রে এই ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ৭৯%।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে তারা লক্ষ্য করেছে যে ক্লিনিকাল পরীক্ষায় ষাটোর্ধ্ব অল্প কয়েকজন প্রাপ্তবয়স্ককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।ফলে ষাটোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর জন্য টিকার কার্যকারিতা পুরোপুরি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে তারা বলেছে এই ভ্যাক্সিন বয়স্ক মানুষদের ওপরও কেন সমানভাবে কার্যকর হবে না তার কোন কারণ তারা খুঁজে পাননি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন চীনের অন্য ভ্যাক্সিন সিনোভ্যাক সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে। সংস্থার বিশেষজ্ঞরা শুক্রবার জানান এই টিকা সম্পর্কে তাদের মতামত জানানোর আগে তারা বাড়তি কিছু তথ্যের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন।

এই ভ্যাক্সিনটিরও লাখ লাখ ডোজ ইতোমধ্যেই সেইসব বেশ কিছু দেশে পাঠানো হয়েছে যেসব দেশ জরুরি ভিত্তিতে এই টিকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।

চীনা টিকার বিশেষত্ব কী?

চীনা ভ্যাক্সিনের একটা প্রধান বিশেষত্ব হল এটি সাধারণ রেফ্রিজেটারে ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়- অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মতই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে "মজুত রাখার এই সুবিধার" কারণে সিনোফার্ম ভ্যাক্সিন "যেসব দেশে সম্পদের অভাব রয়েছে সেসব দেশের জন্য খুবই উপযুক্ত হবে"।

চীনের দুটি টিকাই বর্তমানে যেসব কোভিড টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ করে ফাইজার ও মর্ডানার টিকার থেকে খুবই ভিন্নভাবে কাজ করে।

চীনের ভ্যাক্সিন তৈরি করা হয়েছে চিরাচরিত টিকা পদ্ধতি অনুযায়ী। যেখানে জীবাণুকে নিষ্ক্রিয় করে টিকা তৈরি করা হয়। এতে ভাইরাসের মৃত অংশ ব্যবহার করে তৈরি ভ্যাক্সিন শরীরে প্রবেশ করানো হয়, যাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই ভাইরাসকে চিনতে পারে। এতে জীবাণু শরীরের প্রবেশ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে উঠে রোগের গুরুতর সংক্রমণ ঠেকাতে পারে।-বিবিসি বাংলা

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

সর্বশেষ খবর