রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

পরিবারের ভরসা স্কুলছাত্রী সুখী

আব্দুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

পরিবারের ভরসা স্কুলছাত্রী সুখী

ছয় বছর বয়সেই হারিয়েছে বাবাকে। বাক প্রতিবন্ধী মা, শারীরিক প্রতিবন্ধী নানি আর মানসিক প্রতিবন্ধী ছোট ভাইকে নিয়েই  ১২ বছর বয়সেই অন্যের বাড়িতে ঝি’র কাজ করে সংসারের হাল ধরেছে সুখী। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছে লেখাপড়া। বর্তমানে সে ঠাকুরগাঁও গোয়ালপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী। জানা যায়, সুখী আক্তারের বয়স যখন ছয়, তখনই দুরারোগ্য রোগে মারা যায় তার বাবা। মা শিউলি আক্তার (৪৬) বাক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও এক সময় বাসা বাড়িতে কাজ করতেন। অসুস্থতার কারণে বর্তমানে তিনি পড়ে আছেন নিজ বাসায়। অপরদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধী নানি হামিদা বেওয়া (৭৫) আর মানসিক প্রতিবন্ধী ছোট ভাই সাইফুলের (৮) ভরণ-পোষণের দায়িত্ব এসে পড়েছে সুখীর কাঁধে। তাই চার সদস্যের পরিবারের দুবেলা দুমুঠো  খাবারের সন্ধানে লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রতিবেশীদের বাসায় ঝি’র কাজ করতে হচ্ছে তাকে। সুখী আক্তার জানান, সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কাজ করি অন্যের বাসায়। ১০টায় স্কুলে যাই। বিকালে ফিরে আবারও কাজ করতে চলে যাই অন্যের বাসায়। সে কাজ চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। অন্যের বাসায় কাজ করে যে খাবারটুকু পাই, রাতে বাসায় ফিরে সেটাই ভাগ করে খাই সবাই মিলে। এছাড়াও মাস শেষে কাজের যে পারিশ্রমিক পাই তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের সব চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। কখনও কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। প্রচ- এ শীতে একটা কম্বলও পাইনি আমরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ যেসব জায়গায় গেছি সাহায্যের জন্য, খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। এত কষ্টের মাঝেও তাই লেখাপড়াটা চালিয়ে যাচ্ছি ভালো কিছু করার আশায়। কিন্তু উপবৃত্তিটুকুও পাই না আমি। প্রধান শিক্ষক খাশিরুল ইসলাম জানান, সুখী আমার স্কুলের নবম শ্রেণির একজন মেধাবী ছাত্রী। সে কষ্ট করে লেখাপড়া করে জানতাম। তবে অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালায় আর পাশাপাশি লেখাপড়াটাও চালিয়ে যাচ্ছে এটা জানতাম না। আমরা তাকে স্কুলের পক্ষ থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, পৌর এলাকা আমার আয়ত্তের মধ্যে পড়ে না। তবে তার জন্যে কিছু করার ব্যাপারটা আমি ভেবে দেখবো।

সর্বশেষ খবর