শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ফরিদপুরে বিষধর সাপ নিয়ে দিনভর ‘ঝাপান খেলা’ প্রতিযোগিতা

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে হয়ে গেল চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিষধর সাপের ‘ঝাপান খেলা’। গত বুধবার উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর বাজারে প্রতিযোগিতামূলক এ খেলার আয়োজন করে স্থানীয় যুব সমাজ। 

বিষধর সাপের নানা কসরত আর খেলাকে ঘিরে এলাকায় এদিন তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। বসে গ্রামীণ  মেলা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ছয়টি সাপুড়ে দলের প্রায় শ্তাধিক সাপ নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলে প্রতিযোগিতামূলক এ খেলা। এর জন্য খোলা মাঠে সাপের জন্য তৈরি করা হয় উঁচু মঞ্চ।  আর প্রতিটি দল নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে উঁচু মঞ্চে তাদের সাপ ছেড়ে দিয়ে খেলা প্রদর্শন করে থাকে। আলাদা আলাদা সাপ দিয়ে প্রদর্শন করা হয় তাদের আকর্ষণীয় কসরত। বিষধর সাপের এই দুর্লভ খেলা  দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অগণিত দর্শনার্থী। বাদ্যের তালে তালে দলপতি নিজেও নানা অঙ্গভঙ্গিমায় ফণা তুলে বিষধর সাপকেও নাচাতে থাকেন। শুধু সাপ  খেলাই নয়, একই সঙ্গে চলে গুনিন দলের মন্ত্রতন্ত্রযজ্ঞ। চলে মনসা দেবীর বন্দনা।

 গীত মন্ত্রতন্ত্র আর নানা অঙ্গভঙ্গিমা দিয়ে মানুষের মন জয় করার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলে সাপুড়ের দল।

আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মোসলেম উদ্দিন মল্লিক জানান, প্রায় বিলুপ্ত হওয়া লোক-ঐতিহ্যকে পুনরুজীবিত করতেই এ আয়োজন। ঝিনাইদহ থেকে আগত সাপুড়ে দলের প্রধান মানোয়ার হোসেন জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৩ বছর ধরে সাপের ‘ঝাপান খেলা’ প্রদর্শন করছেন। তিনি বলেন, আমরা মানুষকে আনন্দ দেই এবং এর থেকে আনন্দ পাই। এ জন্যই দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে এ খেলা দেখাই। বাহাদুরপুরের ফেলু সাপুড়িয়া বলেন, অতীতের মতো এখন আর সাপের এই ঝাপান খেলা হয় না। আমাদের পূর্বপুরুষরা সাপের খেলা  দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও অনেকেই এখন আর এ  পেশায় নেই। কারণ সাপকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রচুর অর্থ খরচ হয়। তাই সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে ভবিষ্যতে হয়তো খেলাটি হারিয়ে যাবে।

ঘোষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এস এম ফারুক হোসেন বলেন, চিরায়ত বাংলার ঐহিত্যবাহী এ খেলা দিন-দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আর এলাকার মানুষকে একটু আনন্দ দিতেই এ আয়োজন করা হয়েছে।

প্রতিযোগিতায় সবাইকে পেছনে ফেলে প্রথম হন ঝিনাইদহ জেলার সাপুড়ে মানোয়ার হোসেন, দ্বিতীয় হয় বশিরের দল আর তৃতীয় হয় মধুখালী উপজেলার স্বপন বিশ্বাস।

সর্বশেষ খবর