শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সবজি চাষে সচ্ছলতা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

পুষ্টিমানের দিক থেকে সবজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফসল। আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ কৃষক বছরজুড়ে সবজি আবাদ করে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন। তাদের নিজস্ব পতিত জমি, বাড়ির আঙ্গিনায় মৌসুম ভেদে লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, কলমিশাক, ঢেঁড়স, বরবটি, টমেটো, লাউ ও লাউশাক, পাটশাক, শশা, কাঁচকলা, বেগুন, পেঁপে, করলা, কচুশাক, কচুর লতি, ধনেপাতাসহ নানা প্রকার সবজি চাষ করছেন। কীটনাশকমুক্ত ওইসব শাকসবজি উৎপাদন করে নিজ পারিবারের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে তারা বাড়তি আয় করছেন। যারা সবজি চাষ করছেন তারাই আবার পাড়া-মহল্লায় ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। কম শ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় এ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।

 যথাযথ পরিচর্যার কারণে নিজেদের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

পৌর এলাকার তারাগন, দেবগ্রাম, নারায়ণপুর উপজেলার কালিনগর, সাতপাড়া, হীরাপুর, বাউতলা, উমেদপুর আজমপুর, চানপুসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সবজি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এসব এলাকার বেশিরভাগ কৃষক মৌসুম ভেদে বারো মাসই সবজি আবাদ করছেন। কেউ করছেন বাড়ির ছাদে। বেশিরভাগ লোকজনই কৃষি অফিসের পরামর্শে এ চাষ করছেন।  উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামের কৃষক মো. শামসুল ইসলাম বলেন, স্ত্রী, ছেলে মেয়েসহ ছয়জনের সংসার। জায়গা-জমিও তেমন নেই। অন্য কোনো কাজ না থাকায় দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সবজি আবাদের ওপর চলে তার সংসার। বাড়ি-সংলগ্ন ৩০ শতক পতিত জমিতে কোনো প্রকার কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই তিনি বছরজুরে দেশীয় পদ্ধতিতে  লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, কলমিশাক, ঢেঁড়স, বরবটি, লাউ ও পাটশাক, শশা, বেগুন করলা চাষ করছেন। সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন প্রকারের সবজি নষ্ট হয়। এরপর আবার চাষ করা হয়। জমি তৈরি করে বীজ লাগানোর এক সপ্তাহরে মধ্যেই চারা গজিয়ে ওঠে। এরপর পরিচর্যা, পানি, সার ও  মাচা তৈরিসহ অন্যান্য কাজ করা হয়। এলাকায় সবজির ভালো চাহিদা রয়েছে। সবজি চাষ ও বিক্রি নিজেই করেন। ভ্যানগাড়ি নিয়ে ঘুরে দৈনিক এলাকায় ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেন। খরচ বাদে প্রতি মাসে তার ১৮-২০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানায়। মনিয়ন্দ এলাকার মো. আবু ইউসুফ বলেন, ধান জমি বর্গা করার পাশাপাশি বাড়ি-সংলগ্ন ২০ শতক জায়গায় গত দুই বছর ধরে লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, কলমিশাক, বরবটি, টমেটো, লাউ পাটশাক, বেগুন, পেঁপেসহ নানা প্রজাতির সবজি তিনি চাষ করছেন। উৎপাদিত সবজি থেকে বাড়তি আয় করে ১ ছেলে ও ২ মেয়ের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের খরচ ও তিনি করছেন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে প্রতি মাসে ৮-১০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান। গৃহিণী আফিয়া আক্তার বলেন, বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ করে ভালো ফলন না পাওয়ায় কৃষি অফিসের পরামর্শে নানা প্রকার সবজি চাষ তিনি করছেন। পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে সবজিতে তার প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানায়। আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, কৃষককের মাঝে স্বল্পমেয়াদি শাকসবজি ও মধ্য মেয়াদি লতা জাতীয় শাকসবজির বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর