শিরোনাম
বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি হুমকির মুখে পরিবেশ

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি হুমকির মুখে পরিবেশ

দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি। হুমকির মুখে পরিবেশ। বেশিরভাগ ভাটার পরিবেশ অধিদফতরের কোনো ছাড়পত্র নেই। জনবসতি পূর্ণ এলাকা, স্কুল কলেজের পাশে এবং আবাদি জমি নষ্ট করে গড়ে উঠেছে এসব ইট ভাটা। ফসলি জমি কেটে মাটি সংগ্রহ করে তৈরি করা হচ্ছে ইট। অধিকাংশ ভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে বন উজার করে গাছ পুড়িয়ে। ফলে ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া এবং ধুলায় বিনষ্ট হচ্ছে জীব বৈচিত্র, প্রকৃতি ও পরিবেশ। জনস্বাস্থ্য পড়েছে হুমকির মুখে। ফসল উৎপাদনে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে পারছেন না। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্য করে এসব ভাটা চলছে। ২০০০ সাল থেকে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ, বোদা, আটোয়ারী ও পঞ্চগড় সদর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আবাদি জমি, জনবসতিপূর্ণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠছে এসব অবৈধ ইটভাটা।  একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী টাকার লোভে আবাদি জমি নষ্ট করে এসব অবৈধ ইটভাটা গড়ে তুলেছেন। ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া, গ্যাস ও ধুলায় বিনষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, চিরচেনা প্রকৃতি-পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বায়ুমন্ডল। নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। উজাড় হচ্ছে বনভূমি। কৃষি জমি উর্বরতা হারিয়ে ফেলছে। ভাটার তাপে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন অপরিকল্পিতভাবে এসব ভাটা গড়ে ওঠার কারণে বাদাম, কলা, ধান, ভুট্টাসহ আশেপাশের নানা ধরনের আবাদ পুড়ে যাচ্ছে। ফলে লোকশানের মুখে পড়ছেন কৃষক। উত্তর শান্তিনগর রাজার হাট এলাকার শান্তি রায় জানান, আবাদি জমি কেটে ইট বানানোর ফলে উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগে যে জমিতে বিঘায় ২০ মণ ধান হতো এখন সেই জমিতে ধান হচ্ছে মাত্র ১০ মণ। জমি কেটে খাল করার জন্য বর্ষাকালে পানি জমে থাকছে। বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

 বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন পঞ্চগড় জেলা শাখার আহ্বায়ক একেএম আনোয়ারুল খায়ের জানান যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে ভাটা গড়ে উঠছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পঞ্চগড় ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আজহার আলী সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন ভাটা বন্ধ হলে সরকারের উন্নয়ন কাজ কিভাবে চলবে। ভাটার মাধ্যমে মাত্র ১০ শতাংশ বায়ু দূষণ হয়। এঁরা কোনো দূষণ নয়। ইট ভাটা পরিবেশের খুব একটা ক্ষতি করছে না। মাত্র ১ কিলোমিটারের মধ্যে ৫-৭ টি এবং ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৮-১০টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। অধিকাংশেরই নেই কোনো অনুমোদন। আবহাওয়া ভালো থাকলে একেকটি ভাটা ৩ থেকে ৫ বার ইট উৎপাদন করে। প্রতিবার সাড়ে ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ ইট তৈরি হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতর অভিযান চালিয়ে ৬টি ইটভাটাকে ৩১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, পরিবেশের ক্ষতি করছে এমন অভিযোগ পেলে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

সর্বশেষ খবর