মঙ্গলবার, ২২ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

রাজারহাটে আইন না মানায় কমছে ফসলি জমি

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

রাজারহাটে আইন না মানায় কমছে ফসলি জমি

বাড়ি-ঘর নির্মাণে আইন থাকলেও মানছে না কেউ। ফলে কমছে ফসলি জমি। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় নতুন আবাস স্থাপনের ক্ষেত্রে গত এক বছরের মধ্যে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য একজনও আবেদন করেননি। সারা বছর মিলে পাকা বিল্ডিং নির্মাণে নকশা (প্ল্যান) অনুমোদনের জন্য মাত্র ৭টি আবেদন পড়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে। অথচ প্রতিবছর অপরিকল্পিতভাবে ফসলি জমির উপর নির্মিত হচ্ছে শত শত নতুন বাড়িঘর। ফলে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিল্ডিং কনস্ট্র্রাকশন অ্যাক্ট-১৯৫২ইং, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-১৯৯৩, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-১৯৯৬ এবং ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার, পল্লী ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখার ১১৩০ স্মারক নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী যে কোনো ধরনের পাকা বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের যাচাই-বাচাই কিমিটি থেকে নকশা অনুমোদন গ্রহণের বিধান রয়েছে। এছাড়া ফসলি জমিতে বাড়িঘর স্থাপনের ক্ষেত্রে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন গ্রহণের আইন রয়েছে। তবে এসব বিধি-বিধানের তোয়াক্কা করছে না কেউ। গত এক বছরে এই উপজেলায় বহুতল বিশিষ্টসহ তিন শতাধিক পাকা বিল্ডিং ঘর নির্মিত হয়েছে। এছাড়া আরও প্রায় ৩০০ নতুন বাড়িঘর স্থাপনের কাজ চলছে। জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৬৩টি গ্রামে প্রতি বছর ফসলি জমির উপর শত শত বাড়ি-ঘর তৈরি হচ্ছে। ৫ বছর পূর্বেও গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাটের দুই ধারে বিস্তীর্ণ এলাকায় ছিল শুধু জমি আর জমি। এখন আর তা নেই। এমনকি বিল, জলাশয় ও প্লাবন ভূমি পর্যন্ত ভরাট করে নির্মিত হচ্ছে বাড়িঘর। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল হরিশ্বর তালুক মৌজার দেউলার বিল নামে একটি ফসলের মাঠে ২৫ বছর পূর্বে ৫ শতাধিক একর আবাদি জমি ছিল। কৃষকরা সেখানে ধান, পাট সহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করতেন। বর্ষাকালে পানি আর শুকনো মৌসুমে জমির আইল ছাড়া ভর দুপুরে রোদে ছায়ায় জুড়ানোর মতো কোনো গাছও ছিল না। এখন ভিন্ন চিত্র। দেখে বোঝার উপায় নেই, এই দেউলার বিলটি এক সময় শুধুই ফসলের মাঠ ছিল। ২৫ বছরের মধ্যে সেখানে দুই সহস্রাধিক পরিবার ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে মানুষ বসবাস করছে। মানুষের যাতায়াতের জন্য তৈরি হয়েছে একাধিক কাঁচা-পাকা সড়ক ও বাড়ি সংলগ্ন পুকুর। প্রতি বছর তৈরি হচ্ছে আরও শত শত নতুন ঘর-বাড়ি এমনিভাবে উপজেলার চাকিরপশার বিল, ইটাকুড়ির দোলা, ঘড়িয়ালডাঙ্গা বিল, জুগিদাহ বিল, উকিলের ছড়া, খাউরিয়ার দোলা, বেদারজাল, জোকমারীর দোলা সহ প্রায় ছোটবড় ৩০টি বিল, জলাশয় ও প্লাবনভূমিতে বর্ষাকালে মাছ ও শুষ্ক মৌসুমে ধান চাষাবাদ হতো। এখন এগুলো সংকোচিত হয়েছে। চারধারে ভরাট করে মানুষ গড়ে তুলেছে বসত বাড়ি, দোকান পাট ও হাট বাজার। উপজেলা সদর থেকে ৭টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম্য রাস্তার ধার দিয়েও গড়ে উঠেছে হাজার হাজার বাড়িঘর। অনেক স্থানে চলছে নতুন আবাস স্থাপন বা নির্মাণের কাজ। এমনকি বহুতল বিশিষ্ট ভবনও নির্মাণের কাজও চলছে।

উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, রাজারহাট উপজেলায় মোট পরিবারের হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৪৬ হাজার ৪৮৯টি পরিবারের তথ্য রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে তাসনিম বলেন, এ বিষয়ে মাইকিং করেছি। ক্যাম্পেইন করার জন্য প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদে চিঠি দিয়েছি।

সর্বশেষ খবর