বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

বর্জ্যে ভরাট সেচ খাল

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

বর্জ্যে ভরাট সেচ খাল

কুষ্টিয়ায় অটো রাইস মিলের বর্জ্যে ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছেন খাজানগর-কবুরহাট এলাকার মানুষ। রাইস মিলের বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ খাল। দুর্গন্ধযুক্ত খালের কালচে পানি কৃষিকাজে ব্যবহার করায় নষ্ট হচ্ছে ফসল। মারাত্মক দূষণের কারণে এলাকার পুকুর জলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে। আর খালের পানিতে মেশা বর্জ্যরে দুর্গন্ধে এলাকার মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে। ভারি এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের একটিরও বর্জ্য শোধনাগার না থাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এই এলাকার জীব-বৈচিত্র্য। কুষ্টিয়ার খাজানগর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধান-চালের মোকাম। বটতৈল ইউনিয়ন থেকে শুরু করে খাজানগর, কবুরহাট হয়ে আইলচারা পর্যন্ত এখানে বড় আকারের অর্থাৎ ভারি অটোমেটিক রাইস মিলই রয়েছে ৫৫টি। আর হাসকিং এবং প্রসেসিং মিল সব মিলিয়ে মিলের সংখ্যা প্রায় ৪৫০ টি। এর মধ্যে বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিনশ’টির মতো মিল চালু আছে। এসব রাইস মিলগুলোর কোনোটিরই নিজস্ব বর্জ্য পরিশোধনাগার নেই। মিলের দুর্গন্ধযুক্ত দূষিত পানি পাইপের মাধ্যমে সরাসরি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের খালে। যা চলে যাচ্ছে কৃষি জমিতে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। আবার পুকুরের মাছ মরে ভেসে উঠছে। দূষিত পানির সঙ্গে ধানের চিটা, কুঁড়া ও ছাই থাকায় মুহূর্তের মধ্যেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে খালগুলো। কোনো  কোনো রাইস মিল খালের জায়গা দখল করে খালের ওপর সরু করে নিজেরাই কালভার্ট নির্মাণ করে নিয়েছেন। দূরের রাইস মিলগুলোও পাইপ লাইনের মাধ্যমে বর্জ্যরে সংযোগ রেখেছে খালের সঙ্গে। রাইস মিলের এসব বর্জ্য খালের পানিতে মিশে একদিকে যেমন খালের পানিকে দূষিত করছে অন্যদিকে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ছে এই এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। রাইস মিলের কারণে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ এসব এলাকার মানুষ। খাজানগর এলাকার ব্যবসায়ী আজিজুল হক জানান, এই রাইস মিলগুলোর বর্জ্যরে কারণে এ এলাকার কোনো ফসল ভালো হয় না। মাঠের পানিতে নামলেই হাত-পা চুলকায় যে কারণে শ্রমিকরা এখানে কাজ করতে চান না। ভ্যান চালক নাসির জানান, মিলের চিটা, ময়লা সব এই খালের পানিতে গিয়ে মিশে যায়। যার কারণে এই এলাকায় মশা-মাছির অত্যাচার বেশি। কুষ্টিয়া কলেজের শিক্ষার্থী হাসান বলেন, এ এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। খালের পানিতে রাইস মিলের বর্জ্য এসে মেশায় খালের পানির দুর্গন্ধে গোটা এলাকা বসবাসের একেবারেই অনুপোযোগী হয়ে উঠেছে। বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোমিন মন্ডল নিজেও রাইস মিলের মালিক। তিনি বলেন, মিল মালিকরা  কেউ কারও কথা শোনেন না। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছরই এসব খাল খনন করে। কিন্তু রাইস মিলের বর্জ্যরে কারণে ক’দিনেই খাল ভরে যায়। তিনি জানান, স্থানীয় সাংসদ মিল মালিকদের পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে বললেও কিছুতেই তারা কথা শুনছে না।  খালের পানিতে বর্জ্যরে ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিষ্ণু পদ সাহা বলেন, এসব বিষাক্ত বর্জ্যে ক্ষতিকর ভারি ধাতব পদার্থ যেমন আইরন,  লেডসহ ক্ষতিকর নানা উপাদান থাকতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর