সোমবার, ৫ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

মন্ত্রীকে ফোনে ডিএনডিতে আসার প্রতিশ্রুতি নিলেন শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

ডিএনডি সমস্যা সমাধানে চলমান বৈঠক থেকেই পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমকে ফোন করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। জলাবদ্ধতায় ডিএনডিতে  চরম ভোগান্তিতে আছে বাসিন্দারা। গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পর্যায়ক্রমে জলাবদ্ধতায় ভুগছে তারা। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  প্রায় ১ হাজার ৩০০  কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। গতকাল বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ডিএনডি এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, এলজিআরডি, র‌্যাব, পুলিশ, সড়ক ও জনপদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা। ওই সময় শামীম ওসমান  মোবাইল ফোনে পানি সম্পদ মন্ত্রীকে  বলেন, দ্রুত ডিএনডির জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানের জন্য ডিএনডি এলাকায় এসে পরিদর্শন করে যান। মন্ত্রী বিষয়টি আমলে নিয়ে আগামী রবিবার সরেজমিন ডিএনডি এলাকাটি পরিদর্শনে আসবেন বলে উপস্থিত সংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করেন। এ সময় শামীম ওসমানের মোবাইল ফোন থেকে উপস্থিত সবার প্রতি বক্তব্য রেখে এনামুল হক শামীম বলেন, শামীম ওসমান আন্তরিক ডিএনডির জন্য। আগামী রবিবার আপনাদের সমস্যা সরেজমিন পরিদর্শন করব। ইতিমধ্যে আপনাদের সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রী ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। বরাদ্দ আনতে আপনাদের এমপি রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। আপনারা জানেন ডিএনডি মূলত ইরি চাষের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু মানুষ এখানে বসতি গড়ে তোলে। কত খাল ছিল এগুলো দখল হয়ে আছে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে ডিএনডি সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করব। বক্তব্য শেষ করার আগে শামীম ওসমান ডিএনডি ভিতরে কিন্তু প্রজেক্টের বাইরে জলাবদ্ধতা এলাকার জন্য আরও বরাদ্দ দাবি করেন।

মন্ত্রী সেই সময় পুনরায় আশ্বাস দেন এমপিকে। সভায় শামীম ওসমান উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশের এক্সপোর্টের ২৫ শতাংশ আমার এই এলাকা থেকে হয়। সে কারণেই টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খালটা একদিকে পরিষ্কার করা হচ্ছে আরেকদিকে ভরে যাচ্ছে। লিংক রোডের কাজের জন্য প্রায় ৮ কিলোমিটার রাস্তায় আমরা বালু ভরাট করছি। ওই ৮ কিলোমিটার রাস্তায় ডিএনডির যে খালগুলো তাদের কোনো সংযোগ আছে কী না আমরা তা জানি না, কারণ আমরা টেকনিক্যাল পারসন না। ইসদাইর গাবতলী জোনে আগেও পানি জমতো, কিন্তু এভাবে জমতো না। আপনারা জানেন আমাদের ডাবল রেললাইন হচ্ছে। আমাদের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেললাইন তৈরি করছেন। সেই রেললাইন তৈরি করার পর যেখান দিয়ে পানি সাবরেজিস্ট্রার অফিসের পাশের খাল হয়ে বেরিয়ে যেত সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় চল্লিশ ফুটের মতো স্টীলের স্ট্রাকচার দিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি সেই এলাকার চেয়ারম্যানদের বলেছি সেটা ভেঙে ফেলুন, প্রয়োজনে আমার ওপর দায় দিবেন। তিনি আরও বলেন, কুতুবপুরে ওয়াসার পাশে আমাদের একটা রাস্তা আছে। আগে সেই এলাকায় প্রতি বর্ষায় ওয়াসা ১০টি করে অস্থায়ী পাম্প বসাত। এখন ঢাকা সিটি করপোরেশন ওয়াসার দায়িত্ব নিয়েছে। ফলে সেই পাম্পটা এখন চলছে না। তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আশাকরি তারা সেই পাম্পগুলো চালু করে দেবেন।  আমাদের আরেকটি এলাকা আছে যা অভিশপ্ত এলাকা হয়ে গেছে। সেটা হল ফতুল্লার লালপুর এলাকা। সেই জায়গাটা হল নিচু এবং পানি বের হওয়ার যে রাস্তাগুলো আছে সেগুলো উঁচু। নিচু জায়গা থেকে তো পানি আর উঁচু জায়গায় যেতে পারবে না। ডিএনডির খাল হচ্ছে, তার সঙ্গে যদি লোকাল ড্রেনের সংযোগ না করি তাহলে পানিটা যাবে কীভাবে  এই সমন্বয়হীনতাটা একটি সমস্যা।  শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ছোট একটি এলাকা। মাত্র ৪/৫ লাখ ভোটার। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মানুষ সমস্যায় পড়লে ডিসি সাহেবকে বলছে উপজেলা পরিষদকে বলছে। ওইখানে পানিতে ও মাটিতে চলতে পারে এমন একটি ভেকু দরকার যা বর্তমানে নেই। সেখানে কিছু শিল্পপতি সহ সাধারণ মানুষ ময়লা ফেলতে ফেলতে একেবারে ভরাট হয়ে গেছে। এটা ক্লিয়ার থাকলে এনায়েতনগরের পানিটা পাস হয়ে যায়। ডিএনডির যারা আছেন তারা টেকনিক্যালি সাহায্য করলে লালপুরের পানিটাও আমরা পার করতে পারি। নিজাম সাজনু (যুবলীগ নেতা) সহ আমাদের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ও চেয়ারম্যানরা এখন ড্রেজারের পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের কাজ করছে। গত বছরও সিদ্ধিরগঞ্জ পুরো পানির নিচে চলে গিয়েছিল। তখন আপনারা অটো মেশিন দিয়ে শত কোটি টাকার সম্পত্তির রিস্ক নিয়ে বুদ্ধি ও মেধা খাটিয়ে অটো মেশিনটি মেনুয়্যাল করে চালু করেছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ ঘণ্টায় পানিটা বেরিয়ে যায়, ফলে মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়নি। তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন গত বছর বৃষ্টিতে তো এমন বাজে অবস্থা হয়নি। এবার এমন বাজে অবস্থা। সিটি করপোরেশন এলাকার পানিটা গোরস্থানের দিক দিয়ে এসে ফতুল্লা গাবতলী হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সেটা যেখান দিয়ে বের হওয়ার কথা সেই জায়গাটা আটকে যাচ্ছে এবং এসব এলাকার মানুষ পানিতে ভাসছে। তিনি আরও বলেন, এখানে জনসচেতনতার একটা ব্যাপার আছে। ড্রেন পরিষ্কার করার বাজেট একবারই আসে। পরিষ্কার করার পর দেখা যায় ড্রেনটা দুই-তিন মাসে ভরে যাচ্ছে। ময়লার সঠিক ব্যবস্থাপনা করা হলে এই সমস্যাটা কমে যেত।  দুবছর আগে সিটি করপোরেশনকে ডাম্পিং করার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেন সেখানে ময়লা ফেলে তা দিয়ে ইলেক্ট্রিসিটি বা কোনো শক্তি উৎপাদন করা যায়। জালকুড়ির মানুষের চরম আপত্তির পরেও জেলা প্রশাসন ওই জায়গা বরাদ্দ দেন। আজ পর্যন্ত সেই কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। ময়লাটা ফালানো হচ্ছে লিংক রোডের পাশে। শামীম ওসমান শেষতক বলেন, মন্ত্রী রবিবার আসবেন। আপনারা সবাই উপস্থিত থাকবেন। আমি ৩-৪ বছর আগে সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ  ম মোস্তাফা কামালকে দুপুরে ঝটিকা সফরে নিয়ে এসেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আপনাদের দুর্ভোগ দেখে  কোনো এজেন্ডা না থাকা সত্ত্বে ডিএনডির জন্য প্রকল্প অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিলেন। আপনারা যদি বলেন ডিএনডি  সমস্যা আমি সাত দিন পানিতে দাঁড়িয়ে থাকলে হয়ে যাবে। আমি দাঁড়িয়ে থাকব। আমি দৌড়ঝাঁপ করে টাকা বরাদ্দ নিয়ে এসেছি। এখন কাজটা আপনাদের ভালো করে করার পালা। আমি তো আর কিভাবে কি করতে হবে জানি না। এটা আপনারা যারা ডিএনডি সংশ্লিষ্ট তারা বুঝেন। ওই সময় ডিএনডি প্রকল্প প্রধান প্রজেক্ট ডিরেক্টর তাকভিম বলেন, জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো ৩৬টি ক্যানেলে যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সেই পানি আসতে পারছে না। কারণ খাল ওপরে এলাকার নিচে। এছাড়া খাল দখল বারবার হচ্ছে। ময়লা ফেলে বারবার খাল ভরাট করা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের নিচ দিয়ে তিনটি পানি নিষ্কাশনের পয়েন্ট রয়েছে। সেগুলো বিশ্বরোডের উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রকল্পের বাইরে গিয়ে জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনে ৪টি হাই পাওয়ার পাম্প এনেছি যেগুলো দিয়ে প্রতি ৫ সেকেন্ডে ৪৫০০ লিটার পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ৮০টি ওপরে ছোট বড় পাম্প চলছে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে যে এলাকাগুলো এবার ডুবেছে সেগুলো নানা উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ায় সেই পথ দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হতে পারছে না। আমরা এগুলো নিয়ে সবার সঙ্গে সমন্বয় করছি। গণমাধ্যম কর্মীরা ওই সময় প্রজেক্ট সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তোলেন। এতদিন এসব সমন্বয় করা হলো না কেন বারবার প্রশ্ন তোলেন। শামীম ওসমান সবাইকে নিবৃত্ত করে কিভাবে সামনে সমাধান করা যায় সেই তাগিদ দেন।

সর্বশেষ খবর