বাগানের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে লিচুর গুটির সবুজের সমারোহ। কোনো গাছে মুকুল থাকলেও বেশির ভাগ গাছেই ফলন এসে গেছে। চারিদিকে ম ম গন্ধ। ফলন দেখে লিচুচাষি এবং বাগান কিনেছেন তারাও খুশি। এখন দিনাজপুরের বিভিন্ন বাগান ছাড়াও প্রতিটি বাড়ির বসতভিটায় বা আঙিনায় লিচু গাছে থোকায় থোকায় লিচুর গুটি ঝুলছে। অন্যদিকে চাষিরা বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত। তবে গত মৌসুমে করোনার কারণে বাজারজাতকরণ নিয়ে চিন্তিত থাকলেও এবার ভালো লাভবান হতে পারবেন বলে আশা করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। দেশ সেরা দিনাজপুরের লিচু মানে মিষ্টি ও রসালো স্বাদ আর বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিভিন্ন জাতের লিচুর মধ্যে বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি আর দেশি লিচু গুটি ফলনে নুয়ে পড়েছে এখন গাছের ডালপালা। রমজান শেষে ঈদের পরই বাজারে মাদ্রাজি লিচু পাওয়া যাবে। এবার লিচুর ভালো দাম পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন লিচুচাষিরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, এবার লিচুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার লিচু উৎপাদন হবে।
তবে বেসরকারি হিসাবে লিচু উৎপাদন হবে এর চারগুণ বেশি। যার মূল্য হাজার কোটি টাকা হতে পারে। সদর উপজেলার মাসিমপুর গ্রামের লিচু চাষি মোসাদ্দেক হোসেন জানান, দিনাজপুরে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। দিনাজপুরে ব্যাপক লিচু গাছে মুকুল এসেছিল। আবহাওয়ার কারণে এবার মুকুল বেশি, ফলনো ভালো হবে। এবার মাদ্রাজি লিচুর গুটি কম হয়েছে। তবে দাম ভালো পাওয়া যাবে। পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালাই থেকে মুক্ত করতে চাষিরা লিচু গাছে বালাইনাশক ছিটাচ্ছেন। অনেকে লিচু গাছের আগাছা মুক্ত করছেন। পুলহাট-মাসিমপুরের আসাদুজ্জামান লিটন জানান, দিনাজপুরের দক্ষিণ কোতোয়ালি ও মাসিমপুরসহ আশপাশে কিছু এলাকায় ভিটা, জমি, বসতবাড়ি এবং ডাঙ্গা জমিতে লাগানো গাছই ছিল লিচু আবাদ ছিল সীমিত। কিন্তু এখন এর বিস্তৃতি ব্যাপক।
বিরলের সফিকুল ইসলাম জানান, একটি বড় গাছে ২০ থেকে ২৫ হাজার পর্যন্ত এবং সবচেয়ে ছোট গাছে ১ থেকে দেড় হাজার লিচু পাওয়া যায়। এখন লিচুর গুটি এসেছে। এক মাসের মধ্যে পাকা টসটসে লিচু বাজারে উঠবে। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় মিলে প্রায় আড়াই হাজার লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার গাছ রয়েছে। বাগান ছাড়াও কিছু সংখ্যক বাড়ি, বাড়ি-সংলগ্ন ভিটা জমিতে দুই/চারটি করে লিচু গাছ রয়েছে। এসব গাছে প্রায় ৭ কোটি ৩০ লাখ লিচুর ফলন পাওয়া সম্ভব বলে কৃষি বিভাগ জানায়। এবার লিচুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফলনও ভালো হবে বলে আশা প্রকাশ করে তারা।