বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দুর্ভোগের ২২ কিলোমিটার

নওগাঁ প্রতিনিধি

দুর্ভোগের ২২ কিলোমিটার

নওগাঁর রানীনগর-আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ ২২ কিলোমিটার বেহাল সড়কটি দীর্ঘ চার বছরেও সংস্কার হয়নি। ফলে সড়কের বেহাল দশায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। গত চার বছর ধরে কার্পেটিং তুলে ফেলা হয় সড়কটির। দিন দিন ছোট বড় গর্ত আর ধুলাবালিতে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে মনে হয় সড়কটিতে ছোট ছোট পুকুর বানানো হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা ব্যক্তিদের অবহেলায় সড়কটি আজ এভাবেই মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, সড়কটির সংস্কার কাজের জন্য আবার নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।

জানা যায়, রানীনগর উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ড গোলচত্বর থেকে আবাদপুকুর হয়ে কালীগঞ্জ পর্যন্ত মোট ২২ কিলোমিটার সড়কে যানবাহন চলাচলে চাপ বাড়লে এবং এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে এলজিইডি থেকে সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সড়কটি রানীনগর-আবাদপুকুর থেকে কালীগঞ্জ হয়ে নাটোরের সিংড়ার ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। সড়কজুড়ে ২৬টি কালভার্ট ও ৪টি ব্রিজ পূর্ণ নির্মাণ এবং সড়কটি টিকসই, মজবুত ও প্রশস্থ করে পাকাকরণের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের কাজ ও কালভার্ট নির্মাণের দরপত্রের কাজ পান। দীর্ঘ ২২ কিলোমিটার সড়ক, ২৬টি কালভার্ট ও ৪টি সেতু নির্মাণের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয় ১০৫ কোটি টাকা। এরপর সড়কের সব কার্পেটিং তুলে রাস্তায় রোলার দিয়ে কিছু জায়গায় পাথর ফেলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি কালভার্ট ও ব্রিজ ভেঙে নির্মাণ করে কাজ বন্ধ করে দেয়। গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সড়কের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন করেন। অতিরিক্ত সময়েও কাজ শেষ করতে না পাড়ায় গত বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কটির সংস্কার কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিলসহ ৫ কোটি টাকা জরিমানা করে আবার নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেন। এরই মধ্যে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে। এরপর বন্ধ হয়ে যায় সড়কটির কাজ। উচ্চ আদালত গত বছরের ২৯ নভেম্বর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সরকারের) পক্ষে রায় দেন। এরপরও সড়কটির কাজ আর শুরু করা হয়নি। করজগ্রাম এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, গত প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস আগে রোলার দিয়ে সড়কটি ডলে রাখা হয়। তারপর আর কোনো কাজ হয়নি। বর্তমানে সড়কটিতে খানাখন্দ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ভ্যান চালক রাজ্জাক বলেন, রাস্তা খারাপের কারণে আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সড়কে ধুলাবালি ও বৃষ্টি হলে কাদাপানিতে পরিণত হয়। ফলে এই সড়কে ভ্যান চালাতে কষ্ট হয়। সিএনজি চালক সুরুজ মিয়া বলেন, গর্ভবতী নারী বা জটিল কোনো  রোগীদের নিয়ে আমরা খুব ভয়ে গাড়ি চালাই। আবার রাস্তায় গর্ত থাকার কারণে মালামাল পরিবহনে ঝুঁকি থাকে। তাই দ্রুত এই সড়কটি মেরামতের জন্য দাবি করেন। নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান বলেন, সব জটিলতা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সড়কটির সংস্কার কাজের জন্য নতুন করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ  দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে মালামাল আনতে শুরু করেছে। আশা করছি খুব শিগগিরই সড়কের কাজ শুরু হবে এবং জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

 

সর্বশেষ খবর