শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পাঁচ থানা চত্বরে পড়ে আছে ১২ হাজার যানবাহন

মো. শামীম কাদির, জয়পুরহাট

পাঁচ থানা চত্বরে পড়ে আছে ১২ হাজার যানবাহন

জয়পুরহাটের পাঁচটি থানা চত্বরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা যানবাহনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মোটরসাইকেল। এ ছাড়াও রয়েছে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, পিকআপসহ নানা ধরনের যানবাহন। সব মিলিয়ে যার সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। বছরের পর বছর অযত্ন ও রোদ-বৃষ্টিতে পড়ে থাকায় এসব যানবাহনের অনেকাংশই অকেজো হয়ে গেছে। যানবাহনের কোনোটি রেজিস্ট্রেশনবিহীন আবার কোনোটি মামলায় আটক করা। আদালতের নির্দেশ না পাওয়ায় এসব মোটরসাইকেল একদিকে যেমন নিলামে বিক্রি করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে কোটি টাকা রাজস্ব থেকে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় বছরের পর বছর সদর থানা, পাঁচবিবি, কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুরে পুলিশি হেফাজতে পড়ে থাকছে এসব যানবাহন। অযতেœ নষ্ট হতে হতে এক সময় উপযোগিতা হারাচ্ছে। থানাগুলো সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে বৈধ কাগজপত্র না থাকায়, মাদক বহনের কারণে কিংবা দুর্ঘটনার দায়ে এসব যানবাহন জব্দ করা হয়। বর্তমানে এসব যানবাহনের চেহারা বিবর্ণ রূপ ধারণ করেছে। জব্দ করা এসব যানবাহন আলামত হিসেবে থানায় সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় পুলিশও এসব জব্দ আলামত নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে। জয়পুরহাটের সব কটি থানা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময়ে জব্দ করা মোটরসাইকেল থানা ক্যাম্পাসের বেশির ভাগ জায়গা দখল করে রেখেছে। এসব মোটরসাইকেল রাখায় থানার ভিতরের জায়গা সঙ্কুচিত হচ্ছে। মোটরসাইকেলগুলো রাখার কোনো ছাউনি না থাকায় খোলা আকাশের নিচে রোদে-বৃষ্টিতে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে মরিচা ধরে জরাজীর্ণ ও বিবর্ণ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে সদর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, মোটরসাইকেলগুলোর অনেক মালিকের প্রকৃত কাগজপত্র নেই। এ ছাড়া কোনো কোনো গাড়ির তুলনায় রেজিস্ট্রেশন কিংবা মামলার খরচ বেশি পড়ায় তারা আদালতে মামলা পরিচালনায় অনীহা প্রকাশ করেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় পুলিশের হাতে আটক যানবাহনগুলোর প্রকৃত জিম্মাদার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত। সেখানে পর্যাপ্ত স্থান সংকুলান না হওয়ায় এসব যানবাহন থানা চত্বরে রাখা হয়েছে। যেসব থানার মালামাল কম সেসব থানা থেকে যানবাহনগুলো সংশ্লিষ্ট আদালতের আলামতখানায় স্থানান্তর করা শুরু হয়েছে। আদালত চত্বরে ধারণক্ষমতার অভাবে এ মালামাল স্থানান্তর সম্ভব হয়নি, কয়েকটি থানা চত্বরেও ঠাসাঠাসি করে রাখা। জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাধারণ সম্পাদক নন্দলাল পার্শী জানান, কোটি কোটি টাকার মালামাল এভাবে রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে। যেন দেখার কেউই নেই। একদিকে মালিকানাধীন ও অন্যদিকে রাষ্ট্রের সম্পদ।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশা করছি। এভাবে আলামত জমতে থাকা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, মামলার বাদী ও সাক্ষী উভয়ই পুলিশ। তাদের বদলিজনিত কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সাক্ষী দিতে তারা আসেন না অথবা এ নিয়েও মামলার দীর্ঘ সময় লাগছে। এ ছাড়া বিচারক সংকটের কারণেও মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। ফলে এসব যানবাহন নিলামে বিক্রি করা অথবা প্রকৃত মালিককে হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, জেলায় বিভিন্ন সময় আটক মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ভটভটি, রিকশা-ভ্যান, পিকআপ, ট্রাকসহ প্রায় ১২ হাজার যানবাহন আলামত হিসেবে রয়েছে। এসব যানবাহন সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থানা বা আদালতে নেই। তবে মোটরযানগুলোর গুণগত মান ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা গেলে একদিকে যেমন মালিকরা তাদের যানবাহন ফেরত পাবেন, অন্যদিকে মালিকবিহীন যানগুলো নিলামে বিক্রি করে বিপুল রাজস্ব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হতে পারে।

সর্বশেষ খবর