বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

স্বাধীনতার ৫১ বছরেও হয়নি দখলমুক্ত

ফারুক আল শারাহ, লাকসাম

স্বাধীনতার ৫১ বছরেও হয়নি দখলমুক্ত

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে পরিকোট বধ্যভূমি

মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের পরিকোট বধ্যভূমি। এখানে অসংখ্য নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করলেও মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিচিহ্ন স্বাধীনতার ৫১ বছরেও দখলমুক্ত হয়নি। জানা যায়, নাঙ্গলকোট উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের পরিকোট গ্রামে ডাকাতিয়া নদী সংলগ্ন ‘পরিকোট বধ্যভূমি’র অবস্থান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিভিন্ন স্থান থেকে নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে এখানে ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করত। নির্যাতন-নিপীড়নের চিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে এখনো এলাকাবাসী ভয়ে আঁৎকে উঠে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এখানে দিনের পর দিন জীবিত মানুষকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখত। নির্মম হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে বাঙ্গড্ডা- চৌদ্দগ্রাম সড়কের পরিকোট বেইলি সেতুর উপর থেকে ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দিত। এছাড়া পাক হানাদারবাহিনী এখানে তিনটি গণকবরে অসংখ্য মানুষকে পুঁতে ফেলেছে বলে দাবি স্থানীয় বয়োবৃদ্ধদের। ২০০০ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে নাঙ্গলকোটের তৎকালীন সংসদ সদস্য আলহাজ জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া এ বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণ ফলক উন্মোচন করেন। বছরের পর বছর বধ্যভূমিটি অরক্ষিত থাকলেও ২০২০ সালে বধ্যভূমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ হয়। সরেজমিনে  দেখা যায়, বধ্যভূমির সীমানা প্রাচীরের ভিতরে চলছে ধান পরিমাপের কাজ এবং উত্তর পাশে রয়েছে বিশাল আকৃতির দুটি  খড়ের গাদা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ধানের ব্যবসা ও  খড়ের গাদা দুটি পরিকোট গ্রামের মৃত আব্দুস সোবহানের ছেলে   মোহাম্মদ মানিকের । দ্রুত এ বধ্যভূমিকে দখলমুক্ত করে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন, ওই স্থানে দেশের জন্য জীবন  দেওয়া শহীদদের নামের তালিকা সম্বলিত নেইম- প্লেট ও বধ্যভূমিটি সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি শহীদদের স্বজন, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর। এই বধ্যভূমিতে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা শহীদ সিরাজুল ইসলাম ও শহীদ আলী আশ্রাফ বীর বিক্রমের ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা  দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করি। আমার নাতি-নাতনীদের নিয়ে এসেছি আমার ভাইসহ যাদেরকে এই স্থানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদেরকে শ্রদ্ধা জানাতে। এখানে এসে অত্যন্ত আক্ষেপ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে  দেশকে স্বাধীন করেছি। নাঙ্গলকোটের পরিকোট বধ্যভূমিতে পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। স্বাধীনতার চার যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখানে এখনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি। প্রকাশ করা হয়নি শহীদদের তালিকা। দুবছর আগে সীমানা প্রাচীর করা হলেও এখনো হয়নি দখলমুক্ত। পাক হানাদার বাহিনীর হাতে পরিকোট বধ্যভূমিতে নিহত ডা. গোরঙ্গ চন্দ্র সূত্রধরের ছেলে ফুলিন সূত্রধর বলেন, ১৯৭১ সালে পাক হানাদাররা আমার পিতা শহীদ ডা. গোরঙ্গ চন্দ্র সূত্রধরকে তুলে নিয়ে আসে পরে ভাইকে বাঁচাতে আসে আমার চাচা। তাদের দুই ভাইকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে হানাদারবাহিনী ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দেয়।

 

সর্বশেষ খবর