শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মানবেতর জীবন বর্গাচাষিদের

চার বছর জমিতে চাষাবাদ বন্ধ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

মানবেতর জীবন বর্গাচাষিদের

অনাবাদি জমি ঘুঁটে দেওয়াসহ নানা কাজে ব্যবহার করছেন গ্রামবাসী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাইবান্ধা সদরের বোয়ালী ইউনিয়নের খামারবোয়ালী গ্রামের ৬০ বিঘা দুই ফসলি জমিতে চাষাবাদ বন্ধ আছে চার বছর ধরে। এসব জমিতে বংশানুক্রমে বর্গা চাষ করা অর্ধশত চাষি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ধান না পাওয়ায় পরিবারগুলোর চার শতাধিক সদস্যের তিনবেলা ভাতের ব্যবস্থা হচ্ছে না। সরেজমিন দেখা গেছে, জমিগুলো গবাদিপশুর চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। কেউ দিচ্ছেন ঘুঁটে আবার কেউ শুকাচ্ছেন কাপড়। বর্গাচাষিরা বলেন, জমির মালিক গ্রামের আবদুস সবুর, শহীদুল ইসলাম, শাহাবুদ্দীন ও শরিফুল ইসলাম। দ্বন্দ্বের কারণে তাদের পৈতৃক জমি ভাগাভাগি করছেন না বলে চাষাবাদও করতে দিচ্ছেন না। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা খাদ্য সংকটে পড়েছি। গবাদিপশুর খাবার হিসেবে যে খড় পেতাম এখন তাও পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে গরু-বাছুর বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। বর্গাচাষি আনছার আলী, নজরুল, আয়নাল, সোবহান, মমতাজ, আবু হোসেন, পসার উদ্দিন, ফরিদ মিয়া, শহীদুল ইসলাম বলেন, জমির মালিকরা অবস্থাপন্ন লোক। তাদের জমিতে আউশ ও আমন ধান আবাদ করতাম আমরা। বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১৫ মণ ধান নিয়ে বাকি ৭-১০ মণ মালিককে দিতাম। এখন জমি আবাদ না হওয়ায় মালিকদের কোনো অসুবিধা নেই, কারণ তারা ধনী মানুষ। আমরা সবাই গরিব দিনমজুর। ধান না পাওয়ায় চাল কিনে তিনবেলা খেতে পারছি না। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। জমির মালিক আবদুস সবুর বলেন, আমাদের চার ভাইয়ের বাবা হাজী সামছুল হক সরকার ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপরও জমিগুলোতে বর্গাচাষিরাই চাষাবাদ করতেন। আমাদের মধ্যে দুই ভাই জমি ভাগাভাগি করছে না, আবার চাষাবাদও করতে দিচ্ছে না। বর্গাচাষিদের অভাব সমাধানের চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, সরকার ঘোষণা দিয়েছে এক ইঞ্চি জমিও চাষাবাদের বাইরে রাখা যাবে না। সেখানে আমাদের বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থাকা উচিত নয় বলে আমরা মনে করি। স্থানীয় বোয়ালী ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফুল আলম বলেন, এ বিষয়ে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। জমিগুলো অনাবাদি থাকার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।

সর্বশেষ খবর