শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

এনজিওর প্রতারণার শিকার হাজার হাজার গ্রাহক

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে মধুমতী সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামক একটি অবৈধ এনজিওতে গরু-ছাগল বিক্রিসহ চাকরির পেনশনের লাখ লাখ টাকা লগ্নি করে এখন পথে বসেছেন হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন প্রলোভনে হাজার হাজার সদস্য বা গ্রাহক সৃষ্টি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এনজিওটির পরিচালক মাসুদ রানা নিজের আখের গুছিয়েছেন। কিনেছেন প্রায় ৫০টি ট্রাক সঙ্গে ঢাকার বারিধারায় আলীশান ফ্ল্যাট। এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক অস্ত্র মামলায় কারাগারে থাকলেও বসুন্ধরার ফ্ল্যাটে তার স্ত্রী-সন্তান ব্যয়বহুল জীবনযাপন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে মধুমতী নামক এনজিওটিতে লগ্নি করা অর্থ ফেরত পেতে আন্দোলন শুরু করেছেন প্রতারণার শিকার হাজারো গ্রাহক। অভিযোগে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের আব্বাস বাজার এলাকায় গড়ে ওঠে মধুমতী সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামের এনজিও। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাইক্রোরেগুলেটরি অথরিটি-এমআরএ-এর কোনো অনুমতি না থাকলেও শুধু সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিয়ে এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক মাসুদ রানা অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দিয়ে হাজার হাজার সদস্য সৃষ্টি করে এবং সদস্যরা অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বাড়ির গরু-ছাগলসহ গবাদি পশু এমনকি ভিটেমাটি বিক্রি করে ও পেনশনের টাকা উঠিয়ে ওই এনজিওতে লগ্নি করে। কিন্তু প্রথম প্রথম গ্রাককদের লাভ দেওয়া হলেও প্রায় এক বছর আগে থেকে লাভ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে ওই এনজিওটির কথিত মালিক মাসুদ রানা এনজিওটির মূলধন উঠিয়ে নামে-বেনামে বিভিন্ন স্থানে জমি ও ফ্ল্যাট ক্রয় করে। 

এছাড়া বাজার থেকে বিভিন্ন পণ্য কিনে তা মধুমতী গ্রুপের নাম দিয়ে বাজারজাত শুরু করে।

 যদিও পণ্যগুলোর বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন নেই। ওই সময় মাসুদ রানা বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তাদের উপঢৌকন দিয়ে তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তার অবৈধ কার্যকলাপের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। ওই সময় প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা তাদের লগ্নিকৃত টাকা ফেরত চাইলে এনজিওটির মালিক মাসুদ রানা তাদের টাকা ফেরত না দিয়ে হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে গত বছরের ১৭ নভেম্বর মধুমতী এনজিওর পরিচালক মাসুদ রানা অস্ত্রসহ গোমস্তাপুর থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এরপর থেকেই তিনি কারাগারে রয়েছেন। এদিকে তার গ্রেফতারের কিছুদিন আগেই বিভিন্ন অনিয়মের কারণে মধুমতী সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করে জেলা সমবায় অফিস। পরবর্তীতে মাসুদ রানার ভাই ফারুক এনজিওটির কার্যক্রম অবৈধভাবে চালাতে থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে অনিবন্ধিত এনজিও মধুমতী থেকে টাকা ফেরতের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এতে ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন। এ সময় অনেকের হাতে মধুমতী এনজিওর পরিচালক মাসুদ রানা এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ও আমানতের টাকা ফেরতের দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল। এ সময় মমিন নামে এক গ্রাহক বলেন, আমাদের কষ্টের টাকা মেরে দিয়ে অস্ত্র মামলায় জেলে অসুস্থতার ভান করে আরাম-আয়েশে থাকা মাসুদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হায়াত জানান, বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

সর্বশেষ খবর