বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভোলায় বৃষ্টিতে তরমুজের সর্বনাশ

জুন্নু রায়হান, ভোলা ও এম আবু সিদ্দিক, চরফ্যাশন

ভোলায় বৃষ্টিতে তরমুজের সর্বনাশ

ভোলায় টানা বৃষ্টিতে ফলন বিপর্যয় হয়েছে। এ জেলার উৎপাদিত তরমুজ স্বাদে অতুলনীয়। যার কারণে দেশ-বিদেশে রয়েছে তরমুজের ব্যাপক চাহিদা। চলতি মৌসুমে ভোলায় তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও বৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ খেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে তরমুজ চাষিরা লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। সেখানে দুই তিন দিনের টানা বৃষ্টির কারণে সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে চাষিদের। লাভ পাওয়া তো দূরের কথা। এখন চালানও উঠবে না বলে হতাশায় দিন কাটছে তাদের। এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে চলতি মৌসুমে ভোলা জেলায় তরমুজের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। তবে যারা দেরিতে তরমুজ চাষ করেছিলেন তারা বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, তরমুজের জন্য দ্বীপজেলা ভোলার বেশ সুনাম রয়েছে দীর্ঘদিনের। এখানকার চরাঞ্চলে প্রচুর তরমুজ চাষ হয়। ফলনও হয় আশানুরূপ। বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও তরমুজের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। মৌসুমের শুরুতে আগাম যাদের ফসল উঠেছে তাদের লাভ হয়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু যাদের ফসল উঠতে ১০-১৫ দিন সময় লেগেছে তারা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। অনেকে সব হারিয়ে পথে বসে গেছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তাদের খেতে পানি জমে গাছ মরে যাচ্ছে। তরমুজ কাটার উপযুক্ত না হতেই গাছ মরে যাওয়ায় লোকসনের মুখে পড়েছেন চাষিরা। চরফ্যাশন উপজেলার তরমুজ চাষি জামাল উদ্দিন জানান, তিনি ১২ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। আর ১০-১৫ দিন পরে তিনি ২৫-৩০ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু বৃষ্টিতে তার খেতে পানি জমে গিয়ে সম্পূর্ণ তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু সম্পূর্ণ তরমুজ কাঁচা বিক্রির উপযোগী হয়নি। কিন্তু গাছ মরে যাচ্ছে। চরফ্যাশন কৃষি অফিস জানান, উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের প্রত্যেক ইউনিয়নেই তরমুজ চাষ হয়েছে।

এখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার হেক্টর কিন্তু তার চেয়ে বেশি ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। লালমোহন উপজেলার এক চাষি তোফাজ্জল জানান, তিনি ৪ লাখ টাকা ব্যয় করে তরমুজ চাষ করে মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। অন্য এক চাষি জানান, বৃষ্টি হওয়ায় চাষিরা কাঁচা পাকা সব তরমুজ বাজারে তুলেছেন। পরিপূর্ণভাবে না পাকায় তরমুজ স্বাদ না লাগায় কাস্টমাররা তরমুজ ক্রয় করছেন না। বাজারে কার্তি কম, এতে দাম কমে গেছে। গত সপ্তাহে ৮-১০ কেজি ওজনের একটি তরমুজ বিক্রি হতো ৩০০-৪০০ টাকায়। এখন ওই তরমুজ ১০০-১৫০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না।

সরেজমিন দেখা যায়, জমিতে জমে থাকা পানি সরানোর চেষ্টা করছেন চাষিরা। ফসল যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ওষুধও দিচ্ছেন কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কোথাও গাছ মরে যাচ্ছে। কোথাও তরমুজ ফেটে যাচ্ছে। কিংবা পচে যাচ্ছে তরমুজ। এদিকে ধার-দেনা করে কিংবা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে যারা তরমুজ চাষ করেছেন তাদের দুশ্চিন্তা বেশি। কীভাবে ঋণ শোধ করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তরমুজ চাষিরা। কয়েক দিন ভোলা-লক্ষ্মীপুরের ফেরি বিকল থাকায় তরমুজ ব্যাপারীরা ট্রাকবোজাই করে ঘাটে অপেক্ষা করে থেকে অনেক তরচমুজ ট্রাকেই পচে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কৃষি অফিস সূত্র জানান, ভোলায় সাধারণত পৌষের শুরুতে তরমুজের বীজ বুনতে হয়। ওই সময় জমিতে ধান থাকায় অনেকে ১৫-২০ দিন পর তরমুজের বীজ লাগিয়ে ছিলেন। যারা পরে বীজ লাগিয়ে ছিলেন তাদের তরমুজ কাটার উপযুক্ত না হতেই বৃষ্টির পানি জমে সব নষ্ট হয়ে গেছে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এফ এম শাহাবুদ্দিন জানান, অগ্রহায়ণ মাসের মধ্যেই তরমুজ আবাদ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু তাদের ধান উঠতে কিংবা জমি শুকাতে বেশি সময় লেগে যায়। তাই কোনো কোনো চাষি পৌষের মাঝামাঝি সময়েও তরমুজ চাষ করেছেন। আর যারা দেরিতে চাষ করেছেন তারাই বৃষ্টির কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেশি। তবে চাষিরা যদি ব্রি-৭৬, ব্রি-৯৫ অর্থাৎ যে ধানগুলো আগাম চলে আসে তরমুজের জমিতে সেগুলো চাষ করলে অগ্রহায়ণের মধ্যেই তরমুজ আবাদ করতে পারবে আর তাতে আগে ভাগেই তরমুজ তুলে নিতে পারবে। কৃষি বিভাগ আরও জানায়, চলতি মৌসুমে ভোলা সদর উপজেলায় ৩৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু ৪৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক এম হাসান ওয়ারিসুল কবির জানান, জেলায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও মোট ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। কিন্তু আগাম ভারি বৃষ্টির কারণে তরমুজের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে চাষিদের ঘুরে দাঁড়াবার জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর