বর্ষা মৌসুম এলেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক শুরু হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের মানুষের মধ্যে। কখন নদীতে বিলীন হয় বসতভিটা এ ভয়ে দিন কাটে তাদের। ২০১৮ সাল থেকে উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী শতাধিক পরিবার নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতা আর প্রশাসনের পরিদর্শন এবং আশ্বাসে কেটে গেছে সাত বছর। দ্রুত ভাঙন রোধ করা না গেলে শত বছরের পুরোনো চকবাজার ও অবশিষ্ট বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যাবে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে সবশেষ ১২ ফেব্রুয়ারি এলাকাবাসীর পক্ষে চাতলপাড় ইউপি চেয়ারম্যান অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ উপদেষ্টার কাছে বাঁধ নির্মাণের জন্য লিখিত আবেদন করেন।
জানা যায়, ২০০৯ সালে চাতলপাড় বাজারের উত্তরে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার নোয়াগাঁয়ে মেঘনার পাড় দখল করে ইটভাটা তৈরি করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহের মিয়া। ভাটার পরিধি বাড়ানোর প্রচেষ্টা ও স্বার্থান্বেষী মহলের বিভিন্নভাবে নদী দখলের কারণে প্রবাহের গতি পরিবর্তন হয়। এক পাশে চর পড়ে, অন্য পাশে বিভিন্ন অংশে শুরু হয় ভাঙন। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর জাহের মিয়ার ইটভাটা ভেঙে ফেললেও চর অপসারণ না করায় নদীর স্বাভাবিক গতি ফেরেনি। চাতলপাড় ইউনিয়নের চাতলপাড় গ্রাম, চকবাজার, বড় বাজার ও বিলের পাড়ের শতাধিক দোকান, ফসলি জমি ও বাড়িঘর ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। পাশের ভলাকুট ইউনিয়নের দুর্গাপুর ও বালিখোলার কিছু অংশে দেখা দিয়েছে ভাঙন। বাড়িঘর হারিয়ে কেউ কেউ এলাকা ছেড়েছেন। ভাঙনের আশঙ্কায় আছে মসজিদ, মন্দির, গোরস্থান, শ্মশান, বাজার, ঘরবাড়িসহ শতাধিক স্থাপনা।
চাতলপাড় চকবাজার কমিটির সহসভাপতি নোয়াব আলী বলেন, ‘১০-১২টি গ্রামের মানুষ এ বাজারের ওপর নির্ভরশীল। এরই মধ্যে অনেকের দোকানপাট নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন।’
নদী ও প্রকৃতির সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘তরী বাংলাদেশ’-এর আহ্বায়ক শামীম আহমেদ বলেন, ‘চাতলপাড় ভেঙে মেঘনায় চলে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে মানুষ ভূমিহীন হয়ে পড়বে। প্রতি বছর বর্ষা এলেই উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। যা নদীর স্রোতে টিকে থাকতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী বাঁধের জন্য পাউবোর হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কথা শোনা গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমান বলেন, ‘ভাঙন রোধে আগামী সপ্তাহেই অস্থায়ীভাবে কাজ শুরু করতে পারব। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষা রয়েছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক দিদারুল আলম বলেন, ‘ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’