জেলার মোল্লাহাট উপজেলার সিংগাতি গ্রামে চৌধুরী বংশে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ ৫০ বছরের। মধুমতী নদীর চরের জমি নিয়ে শুরু হয় এ বিরোধ। এরপর তা রূপ নেয় আধিপত্যের দ্বন্দ্বে; যা নিয়ে বিভিন্ন সময় দুই পক্ষে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এ পর্যন্ত মারা গেছেন সাতজন। শনিবার কোরবানির মাংস বিতরণ কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপির দুই গ্রুপ চৌধুরী বংশের এরশাদ চৌধুরী ও মাসুম চৌধুরীর লোকজন। নিহত হন এরশাদ চৌধুরীর ছেলে মুরসালিন চৌধুরী (৩০) ও তাঁর ভাইয়ের ছেলে আজিজুল চৌধুরী (৪০)।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মধুমতী নদীর পাশে একসময়ের প্রাণবন্ত সিংগাতি গ্রাম এখন আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। চৌধুরী বংশের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বৃদ্ধা লিজা বেগম বলেন, ‘চৌধুরী বংশের দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ ৫০ বছরের। এ দ্বন্দ্বে এখন পর্যন্ত সাতজন নিহত হয়েছে। এরশাদ চৌধুরী ও মাসুম চৌধুরী সম্পর্কে আপন চাচা-ভাইপো, সবাই এক বংশের লোক।’ জিতু হাসান বলেন, ‘ছোট থেকে দেখে আসছি এ বিরোধ। একের পর এক লাশ পড়ছে তার পরও বিরোধের শেষ হচ্ছে না।’ মাসুম চৌধুরীর স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম বলেন, ‘কোরবানির দিন মাংস বিতরণ করতে গেলে ওরা (এরশাদ চৌধুরীর লোকজন) প্রথমে আমাদের লোকের ওপর হামলা চালায়। এটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত হত্যাকা , আমাদের পরিবারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের পরিবারের কেউ জড়িত না।’ মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ শাহাবুদ্দিন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি মাসুম চৌধুরীর লোক। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে দুটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। যার একটির বাদী এরশাদ চৌধুরী, অন্যটির বাদী তাঁর ছেলে দিন মোহাম্মদ চৌধুরী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ নিহত মুরসালিনের বোন রহিমা বেগম বলেন, ‘আমার ভাইকে বাঁচাতে আমি থানার ওসিসহ মাসুম চৌধুরীর লোকজনের পা জড়িয়ে ধরেছি, তার পরও শেষরক্ষা হয়নি। ওরা আমার ভাইকে হত্যা করে। আমার ভাইয়ের আট বছর বয়সি একটি ছেলে ও দেড় মাসের আরও একটি বাচ্চা রয়েছে, ওদের এখন কী হবে?’
নিহত আজিজুল চৌধুরীর বোন লিনচিনা বেগম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের ছোট চারটি ছেলে রয়েছে। ওরা কীভাবে বাঁচবে?’