একসময় সবুজ বেষ্টনীতে ঘেরা নবাবি আমলের ঐতিহ্যবাহী গড়পুকুরে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে নির্মল বায়ু সেবন ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এখানে আসত শহরবাসী। কিন্তু নানা কারণে এটি এখন মরতে বসেছে। কথিত আছে, নবাব আলিবর্দি খানের সময় ডাকাতদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে রাজা গোয়ালা চৌধুরী বাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করেছিলেন। যার ধ্বংসাবশেষ মেহেরপুর গড়পুকুর। সাত একর জায়গা নিয়ে গড়পুকুর কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। জানা গেছে, কয়েক শ বছরের ঐতিহ্যবাহী গড়পুকুরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ার উদ্যোগ নেয় মেহেরপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালে ইউজিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ১১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দে কার্যাদেশ পায় বগুড়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মসুমা ট্রেডার্স। ২০২১ সালের ২ মার্চ কাজের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু না করে ২০২২ সালের অক্টোবরে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গোলাম সরোয়ার ও তানভীর আহমেদকে কাজটি হস্তান্তর করে। তবে কয়েকবার সময় বাড়িয়েও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। পরে ৬ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন হয় ও বাকি টাকা ফেরত যায়। ওই অবস্থায় পড়ে আছে গড়পুকুর।
ব্যবসায়ী মিঠু বলেন, গড়পুকুর ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। আমরা এর প্রতিকার চাই। পুকুরপাড়ের বাসিন্দা শ্যামা বলেন, গড়পুকুরে মানুষ একসময় সাঁতার কাটত। পুকুর পাড়ি দিতে ভয় পেত। সেই গড়পুকুরকে বানানো হয়েছে অ্যাকুরিয়াম। পুকুরের চারপাশে ওয়াকওয়ে, বিশ্রামাগার, কপিশপ, কনসার্ট গ্যালারি, শিশুদের খেলার স্থানসহ তাদের জন্য বিভিন্ন রাইডার হওয়ার কথা ছিল। এর কিছুই হয়নি, বরং সৌন্দর্য বৃদ্ধির নামে প্রচুর অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে গড়পুকুর মেরে ফেলা হয়েছে।
ইতিহাসবিদ ও মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল আমিন ধূমকেতু বলেন, নবাবি আমলের রাজা গোয়ালা চৌধুরী মেহেরপুরে ভবন নির্মাণ করে। সেই ভবনে ভূতল কক্ষ ছিল। ভূতল কক্ষকেই আঞ্চলিক ভাষায় গড় বলা হয়। এটা আমাদের একটা ঐতিহ্য। গড়পুকুর নিয়ে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও পৌরসভা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিন্তু ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি আদি অকৃত্রিম রূপ ধরে রাখার কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। এর পরিবেশগত দিকটারও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
মেহেরপুর পৌরসভার প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, প্রকৃত পক্ষে গড়ের যেসব কাজ হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। পরে প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পের টাকা ফেরত যায়। এতে আমরা কাজ সম্পন্ন করতে পারিনি। আবারও যদি কোনো জায়গা থেকে অর্থায়ন পাওয়া যায় তাহলে কাজটি সম্পন্ন করা হবে। শহরে আর কোনো বিনোদনের জায়গা না থাকায় মানুষ এখানে চলাফেরা করছে।
মেহেরপুর পৌর প্রশাসক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানাব।