জয়পুরহাটের সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা পাঁচবিবি। এখানে রয়েছে সীমান্তের প্রবেশপথ। সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধ বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো পাঁচবিবি শহরে স্থাপন করা হয়েছিল ২ শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা। যার অধিকাংশই এখন গায়েব। বর্তমানে ৮-১০টি সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও সেগুলো অকেজো। ক্যামেরাগুলোর সংযোগ তার ছিঁড়ে পড়ে আছে। ফলে এলাকায় বেড়েছে চোরাচালান, চুরি, ছিনতাই, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
উপজেলা শহরের বাসিন্দারা বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট এসব ক্যামেরা খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। যাতে চোরাচালানসহ বড় বড় অপরাধ সহজে তারা করতে পারে। প্রশাসন যেন অপরাধীকে শনাক্ত করতে না পারে। প্রশাসন বলছে, খুব শিগগিরই ওইসব স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, সিসিটিভি না থাকায় গত এক বছরে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান, সিএনজি ছিনতাইসহ অর্ধশতাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব অপরাধ রাতের চেয়ে দিনে বেশি হচ্ছে। গত ২৫ জুন বিকালে পৌর শহরের দানেজপুর মহল্লার বাসিন্দা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিমকে প্রকাশ্য হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় ছাত্রদল নেতা শামীম হোসেনকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় জনতা একজনকে আটক করলেও পুলিশ বাকিদের শনাক্ত করতে পারেনি। সচেতন মহল বলছে, ওইসব স্থানে সিসি ক্যামেরা থাকলে জড়িতদের সহজে ধরা যেত। জানা যায়, সীমান্তে সংঘটিত অপরাধ রোধ ও জড়িতদের সহজে শনাক্ত করতে পাঁচবিবি পৌর ও থানা প্রশাসন ২০২৩ সালে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে। এরপর থেকে অপরাধপ্রবণতা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো খুলে নিয়ে যাওয়ার পর পুনর্¯’াপন করা হয়নি। ফলে পাঁচবিবি পৌর শহরে আগের মতোই চুরি, ছিনতাই, হত্যাসহ নানা অপরাধ বেড়েছে।
পৌর শহরের অটোচালক ফরিদুল ইসলাম বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা থাকতে রাতেও কোনো ভয় লাগত না। এখন দিনের বেলায় অটো নিয়ে চলাচল করা যায় না। অটো রেখে এক মিনিটও দাঁড়ানো যায় না। দিনে-রাতে ছিনতাই, চুরি ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। পাঁচবিবি বণিক সমিতি সভাপতি তাইজুল ইসলাম বলেন, আগে ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাবেচা করতে পারতেন। এখন একের পর এক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটায় ব্যবসায়ীরা খুবই আতঙ্কে আছেন। সিসি ক্যামেরাগুলো লাগালেই আর তাদের ভয় থাকবে না। দ্রুত ক্যামেরাগুলো পুনর্¯’াপন দাবি করেন তিনি। পাঁচবিবি পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী মারুফ আহসান বলেন, ‘ইতোমধ্যে শহরের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোর পয়েন্ট নির্ধারণের কাজ শুরু করেছি। খুব শিগগিরই পুনর্স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা হবে।’
পাঁচবিবি থানার ওসি মইনুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধমূলক কাজ ও অপরাধীকে শনাক্ত করতে সিসিটিভি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ক্যামেরাগুলো না থাকায় শুধু যে জনসাধারণই সমস্যায় পড়েছে তা নয়, আমরাও বেকায়দায় আছি। শহরে নতুন করে আবার ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’