একটি সেতুর আশায় ৩০ বছর কেটে গেল। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের মাইলা নদীর দেউলী ঘাটে এখনো সিমেন্টের খাম্বার ওপর ভাঙাচোরা বাঁশ-কাঠের সাঁকোয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয় আশপাশের সাত গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে সাঁকোটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। তাই পণ্য নিয়ে কৃষকদের প্রায় ৫ কি.মি. ঘুরে যেতে হয়।
ঘোড়াঘাটের সিংড়া ইউনিয়নের সীমানা ঘেঁষে মাইলা নদীর তীরে দেউলী ঘাট। আশপাশের এসব গ্রামের শিশু, শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ ও রোগীদের দুর্ভোগ ও উৎকণ্ঠার আরেক নাম হয়ে দাঁড়ায় এই সাঁকো। স্থানীয়রা জানায়, সিংড়া ইউপির দেউলী ঘাট এলাকা কৃষিনির্ভর এবং জনবহুল। এই ঘাট উপজেলা সদরের ওসমানপুরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। প্রতিদিন নদীর ওপারের এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া, চিকিৎসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। তবে কৃষি পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য বিরাহিমপুর গুচ্ছগ্রাম হয়ে প্রায় ৫ কি.মি রাস্তা ঘুরতে হয়। এতে সময় ও অর্থ অপচয় হয়।
খাইরুল গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বয়োবৃদ্ধ তারাপদ সরকার জানান, যৌবনকালে সেতু পাইনি। এ বুড়া বয়সে এসে হামরা (আমরা) সেতুর আশা ছেড়ে দিছি। সাংবাদিক হেরক কয়া আর কী হবি। তারা কি করবার পাবি! কত এমপি, মন্ত্রী, চেয়ারম্যান, মেম্বর গেলো আলো হামাহরের অবস্থা উঙ্কাই (একই রকম) থাকলো। শ্যামপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ শচীনসহ শাহারুল ও বিষ্ণু বলেন, এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে লোকজন এসে এক সপ্তাহ ধরে তাঁবু ফেলে বিভিন্ন মাপজোক করে, মাটি পরীক্ষা করে। তারা চলে গেছে আর কখনো আসে নাই। এ সেতু আসলে হবি কিনা জানি না। এখন হামরা (আমরা) আশা ছাড়ে দিছি। বন্যার সময় হামাহরে (আমাদের) এমনি কষ্ট। সাঁকো ডুবা যায়া কাঠ ভাসা দূরে চলে যায়।
এলাকার শিক্ষার্থী নাসরিন আক্তার বলেন, বর্ষায় সাঁকো দিয়ে স্কুলে যাওয়া খুব ভয় লাগে। অনেক সময় পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সিংড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাত হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। নতুন করে উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের মাধ্যমে আবারও প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি সুসংবাদ পাব।