গেল চার দশক ধরে কয়েক প্রজন্মের যেসব শ্রোতা এমটিভির মিউজিক চ্যানেলের সঙ্গে নিজেদের কৈশোর যৌবন পাড়ি দিয়েছেন, তাদের জন্য মন খারাপের একটি খবর আছে। তা হলো- এমটিভির সংগীতভিত্তিক চ্যানেলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
দ্য ইকোনমিক টাইমস লিখেছে, এমটিভির মূল প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট গ্লোবাল ঘোষণা দিয়েছে, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর এমটিভি এইটিস, এমটিভি নাইন্টিস, এমটিভি মিউজিক, ক্লাব এমটিভি ও এমটিভি লাইভের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে।
প্যারামাউন্ট গ্লোবাল বলছে, টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ছোট করে এখন থেকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। কারণ নব্বই এবং দুইহাজার সাল পরবর্তী সময়েও যে পরিমাণ দর্শক এই চ্যানেলটির ছিল, গত কয়েক বছরে সেই সংখ্যা কমেছে ক্রমশ। ২০২৫ সালে এসে এমটিভি মিউজকের দর্শকের যে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে, তা আর্থিক দিক থেকে লাভজনক নয়। তবে ‘এমটিভি এইচডি’ নামের মূল চ্যানেলের সম্প্রচার চালু থাকবে। তবে সেখানে থাকবে না কোনো সুরের ছোঁয়া। রিয়েলিটি শো ঘিরেই চ্যানেলের সম্প্রচার চলবে। থাকছে এমটিভি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মও।
মিউজিক চ্যানেলগুলোর প্রচার বন্ধ হবে প্রথমে যুক্তরাজ্য এবং আয়াল্যান্ডে। তারপর অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি এবং ব্রাজিলের মত দেশের সংগীতের শ্রোতারাও আর এই মিউজিক চ্যানেলগুলো দেখতে পাবেন না। কয়েক প্রজন্মের দর্শক-শ্রোতার গান শোনার অভ্যাস গড়ে তোলায় এমটিভি বড় অবদান রেখেছে। এক সময় তরুণদের সংগীত, ফ্যাশন ও জীবনধারার প্রতীক ছিল চ্যানেলটি।
১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘আই ওয়ান্ট মাই এমটিভি’ স্লোগান নিয়ে শুরু হয় এমটিভির যাত্রা। শুরু থেকেই পপ সংস্কৃতিতে বৈপ্লবিক রূপান্তর আনতে শুরু করে চ্যানেলটি। পরে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যে এবং ১৯৯৫ সালে এমটিভি এশিয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে ভারতে শুরু হয় সম্প্রচার। মিউজিক ভিডিও শুরুর আগে এমটিভির মিউজিক চ্যানেলের স্ক্রিনে এক বা একাধিক ভিজে ও ভিডিও জকিরা যেসব বার্তা দিতেনম সেগুলো গানের চেয়েও বেশি আগ্রহোদ্দীপক ছিল অনেকের কাছে।
ভারতের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বলিউডে নাম লেখালেও মালাইকা অরোরা এমটিভির ভিজে হিসেবেই পরিচিত পান। পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের থ্রিলার গানের মিউজিক ভিডিওর প্রিমিয়ার হয়েছে এমটিভি মিউজিকে। বেশ কয়েকটি ব্যান্ড ও শিল্পীর অংশগ্রহণে ১৯৮৫ সালের লাইভ এইড শো সরাসরি সম্প্রচার ও এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ড চালুর মত অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন আছে এমটিভির ইতিহাসে।
হালের দুনিয়ায় দর্শক-শ্রোতার বিনোদন মাধ্যম ব্যবহারের অভ্যাস বদলে গেছে। মানুষ ইউটিউব, স্পটিফাই, টিকটক ও সোশাল মিডিয়ায় অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকছে। ক্রমশ টেলিভিশন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সবাই। টিভির সাবেক ভিডিও জকি সিমোন অ্যাঙ্গেল বলেন, “এটা কষ্টের সময়। এমটিভি কেবল গান নয়, ছিল নাচ, ফ্যাশন আর তরুণদের মিলনমেলা।” তিনি বলেন, ভোক্তারাও এসব ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। ভুলে যেতে বসেছে এমটিভির কথা।
বিডি-নিউজ/আব্দুল্লাহ