নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা আনু মার্মা(১৮) বান্দরবানের রুমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। গ্রাম্য সালিশে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়েটির। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে জায়গা হয়নি তার। শ্বশুর, শাশুড়ী ও স্বামী কর্তৃক কোনো প্রকার ভরণপোষণ ও চিকিৎসা খরচ না পাওয়ায় আনু এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
আনু মার্মা বান্দরবানের রুমা উপজেলায় পাইন্দু ইউনিয়নের চাইরাগ্র পাড়ার বাসিন্দা দিনমজুর মংহ্লাঞো মার্মার মেয়ে। বেশ কয়েকমাস আগে একই এলাকার বাসিন্দা সাচিংউ মার্মা ও মানুচিং মার্মানী'র ছেলে মংঞোশে মার্মা (১৭) বাড়িতে একা পেয়ে মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এতে মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। বিষয়টি পাড়ার লোকজনের কাছে জানাজানি হলে পাড়া প্রধান (কার্বারী) কার্যালয়ে সামাজিকভাবে সালিশ-বিচার বসে।
পাড়া প্রধান (কার্বারী) উচ্চমং মার্মা জানান, সামাজিকভাবে সালিশে ধর্ষক মংঞোশে মার্মা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও ধর্ষকের পিতা সাচিংউ মার্মা মেয়েটিকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিতে অসম্মতি পোষণ করে। মেয়েটির মা-বাবা শান্ত প্রকৃতির, অসহায় ও দরিদ্র। এছাড়া ধর্ষিতা মেয়েটি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। মীমাংসা না হওয়ায় বিষয়টি মৌজা হেডম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গত ২৫ ডিসেম্বর রুমা চান্দাঁ মৌজার হেডম্যান সামংউ মার্মা তাঁর সভাপতিত্বে একজন ইউপি মেম্বার, তিনজন পাড়া প্রধান সহ গণ্যমান্যদের নিয়ে সালিশ-বিচারের আয়োজন করে। বিচারে ধর্ষণে অভিযুক্ত মংঞোশে মার্মা ওই মেয়েটিকে স্ত্রী হিসেবে পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা দিয়ে তার ভরণপোষণ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে রাখতে একটি অঙ্গীকারনামা দেন। কয়েকদিন পরে মেয়েপক্ষ অভিযোগ নিয়ে আবার আসলে তাদেরকে পুলিশের কাছে যেতে বলা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মংঞোশে মার্মা বলেন, আমার মা-বাবা না মানার কারণে মেয়েটিকে ঘরে রাখা সম্ভব হয়নি। তবে আমি মেয়েটির সাথে সংসার করতে চাই।
চাইরাগ্র পাড়ার পুহ্লাঅং মার্মা, ক্যইমংউ মার্মা ও অংসিংথোয়াই বলেন, নিজ পাড়ায় আসার পর ছেলের মা-বাবা মেয়েটিকে ঘরে তুলতে গড়ি-মসি করে বলে শোনা গেছে। সাচিংউ মার্মা মানুষ হিসেবে ভাল নয়। বাবার প্রশ্রয় পেয়ে ছেলেটি ক'দিন আগে মাতালামী করে পাড়ায় আগুন লাগিয়ে দেয়। পাড়াবাসী আপ্রাণ চেষ্টায় কোনো রকমে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ধর্ষিতার মা মেমাহ্রী মার্মা জানান, মেয়ের অবস্থা ভাল নয়, হাত-পা ও চেহারা ফুলে গেছে। আর পেটের যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। পাড়ার লোকজনের সহযোগিতায় চিকিৎসার জন্য রুমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে ভর্তি করানো হয়েছে। টাকা-পয়সাও নেই। মেয়েটিকে কিভাবে বাঁচাবো, চিকিৎসা চালাবো... বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত চিকিৎসক ডা. শান্তনু ঘোষ বলেন, রোগীর অবস্থা ভাল নয়। অবস্থার উন্নতি না হলে জেলা হাসপাতালে রেফার করতে হতে পারে।
পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান ক্যসাপ্রু মারমা বলেন, ছেলের বাবা সাচিংউ মার্মার একতরফা অসভ্য আচরণের কারণে সামাজিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে রুমা থানার পুলিশের এসআই মোহাম্মদ আলমগীর জানান, মেয়ের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/১৯ জানুয়ারি ২০১৬/ এস আহমেদ