ফরিদপুর পেৌরসভার দুই পরিচ্ছন্নতা কর্মী মানিক জমাদ্দার ও ভরত জমাদ্দারের নৃসংশ খুনের ঘটনায় শুক্রবার রাতে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা হয়েছে। নিহত মানিক জমাদ্দারের স্ত্রী টুম্পা রানী জমাদ্দার অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে শুক্রবার রাত ১০টা ৫ মিনিটে একটি মামলা দায়ের করেন। এদিকে, এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল পশ্চিম খাবাসপুরের মিয়া বাড়ি এলাকা থেকে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। আটকৃকতরা স্থানীয় একটি নির্মানাধীন ভবনের শ্রমিক বলে জানা গেছে। আলোচিত জোড়া খুনের ঘটনার কোনো ক্লু এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
শুক্রবার রাতে মানিক জমাদ্দারকে শহরের অম্বিকাপুর শ্মশানে সমাহিত করা হয়েছে। আর তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি নাটোরের চৌকিপাড়ায় পাঠানো হয়। সেখানে তাকে সমাহিত করা হয়।
ফরিদপুর হরিজন সম্প্রদায়ের সভাপতি রিপন জমাদ্দার জানান, এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে সড়ক পরিচ্ছন্নতার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া রবিবার জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। দ্রুত ঘাতকদের শনাক্ত করে গ্রেফতার না করা হলে তারা কঠোর আন্দোলনে নামবে।
আজ শনিবার আলীপুর হরিজন পল্লীতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে বসবাসরত সকলের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। পাশাপাশি সকলের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পল্লীর কয়েকজন বাসিন্দা জানান, পল্লীতে বসবাসরত বেশীর ভাগ নারী-পুরুষ পৌরসভার পরিচ্ছন্নতার কাজ করে। গভীর রাত থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত তারা পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লার রাস্তা ঝাঁড়ু দেয়। অনেক সময় নারী পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের উপর বখাটেরা নানা বাজে আচরণ করে। এ জোড়া হত্যাকান্ডের পর নারী পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পাশাপাশি পুরুষ কর্মীরাও এখন আতংকের মধ্যে রয়েছে। পল্লীর বাসিন্দারা এ ধরনের হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে ঘাতকদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।
নিহত মানিকের স্ত্রী টুম্পা জমাদ্দার জানান, তার স্বামীকে হারিয়ে তিনি এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ৪ বছরের শিশু কন্যাকে নিয়ে সে এখন কোথায় যাবে, কি করবে এমন প্রশ্ন তার। মানিক ও ভরতের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন তিনি।
হত্যাকান্ডের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ফরিদপুর পৌরসভা শুক্রবার বিকেলে এক জরুরি সভা করে। পৌর মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথুর সভাপতিত্বে এ সভা থেকে ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানানো হয়। এছাড়া পৌর কর্তৃপক্ষ নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদানের ঘোষণা দেন।
ফরিদপুর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিমউদ্দিন আহমেদ জানান, বেশ কয়েকটি 'ক্লু' সামনে রেখে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ঘটনার ক্লু উদঘাটন এবং ঘাতকদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
গত শুক্রবার ভোরের যে কোনো সময় শহরের পশ্চিম খাবাসপুরের মিয়া পাড়া মহল্লায় হরিজন পল্লীর দু বাসিন্দা ও পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী মানিক জমাদ্দার ও ভরত জমাদ্দারকে নৃসংশভাবে কুপিয়ে হত্যা করে দুবৃর্ত্তরা।
বিডি-প্রতিদিন/৯ এপ্রিল ২০১৬/শরীফ