মাগুরার শালিখা উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নে রামানন্দকাঠি মসজিদের ইমামের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা এলাকায়। পুনরায় হামলার আশংকায় চার গ্রামের শতাধিক পুরুষ এলাকা ছেড়েছে। গত ৭ মে অনুষ্ঠিত গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া নিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে রামানন্দকাটি, সাবেক খাটোর, খাটোর, বামনখালি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাড়িতেই পুরুষ মানুষ নেই। বন্ধ রয়েছে স্থানীয় বাজারগুলো। অন্তত ২০টি দোকানে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। গঙ্গারামপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ ফিরোজ ও স্থানীয় বিএনপি নেতা সোনা কাজীর লোকজন এসব হামলা, লুটপাট চালিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নির্বাচনের দিন মধ্যরাত থেকে শুরু করে গত তিনদিন প্রতি রাতেই বেশকিছু সশস্ত্র ক্যাডার এসব গ্রামে এসে তাদেরকে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। কারণ হিসেবে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে, এ ইউনিয়নের বামনখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকার কারণে ফলাফল স্থগিত রয়েছে। মোট ভোটে বিদ্রোহী প্রার্থী সামান্য কিছু ভোটে এগিয়ে আছে। কিন্তু বামনখালি কেন্দ্রটি আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আব্দুল হালিমের নিজ গ্রামে হওয়ায় সেখানে মোট ১৪শ' ভোটের মধ্যে বেশিরভাগ ভোট তার পাবার কথা। ফলে তার বিজয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে রয়েছে। এ কারণে ওই এলাকা থেকে তার সমর্থকদেরকে বাড়ি ছাড়া করতেই এসব হামলা ও হুমকির ঘটনা ঘটছে। এরই এক পর্যায়ে আজ সকালে রামানন্দকাঠি মসজিদের ইমাম মো. শিমুল হোসেনের উপর হামলা চালিয়ে তাকে মারাত্মক জখম করায় নতুন করে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
সাবেক খাটোর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, আয়ুব মাষ্টার, জুয়েল, সাত্তার, সামাদ মিয়া, মুরাদসহ একাধিক ব্যক্তি ওই এলাকার সামসুদ্দিনের বাড়ির পাশে শিমুলকে ডেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে বলে জানা গেছে। তাকে আশংকাজনক অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিমুল সাবেক খাটোর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মোহন মোল্যার ছোট ভাই। নির্বাচনে মোহন মোল্যা নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার কারণে তার ভাই শিমুলকে একা পেয়ে সকালে এ হামলা চালানো হয়।
বামনখালি গ্রামের বাসিন্দা চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হালিমের ভাতিজা ও কুচিয়ামোড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, গত তিনদিন ধরে প্রতিপক্ষ শেখ ফিরোজ ও সোনা কাজীর লোকজনের ভয়ে তিনি স্কুলে যেতে পারছেন না। বাড়ি থেকে বের হলেই তার হাত পা কেটে দেওয়া হবে এমন হুমকি দিচ্ছে ওই সন্ত্রাসীরা।
একই গ্রামের ডালিয়া বেগম বলেন, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কারণে সোমবার রাতে একদল সন্ত্রাসী তাদের বাড়িতে এসে তার ছোটভাই আসাদুজ্জামানকে অপহরণের হুমকি দিয়ে গেছে। সে এখন ভয়ে বাড়িছাড়া। আয়ুব আলী বলেন, সোনা কাজীর লোকজনের হুমকিতে তিনি তিনদিন যাবত সাবেক খাটোর বাজারে নিজের দোকান খুলতে পারছেন না।
একই এলাকার আয়ুব হোসেন, ইমদাদ মোল্যা, রাকিবুল ইসলামসহ কমপক্ষে ১০জন একই ধরণের অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হালিম জানান, ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেবার কারণে তার সাথে সাবেক এমপি ও মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী সালিমুল হক কামালের ছোট ভাই সোনা কাজীর বিরোধ শুরু হয়। এ বিরোধের সূত্রেই তার নামে ২০০১ সালে খুনের মিথ্যা মামলাসহ একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নানাভাবে হয়রানি ও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান ইউপি নির্বাচনে সোনা কাজী তার প্রতিপক্ষ প্রার্থী শেখ ফিরোজের পক্ষ নিয়ে এসব হামলা, ভাংচুর ও সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। তিনি একাধিকবার পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না। তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই সোনা কাজী ১৯৯৪ সালের আলোচিত মাগুরা-২ উপনির্বাচনে চরমপন্থী সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী দিয়ে গোটা নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ও তার চাচাতো ভাই কাজী কামালকে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে বিজয়ী করে। যা নিয়ে আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ঘটায়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের এসআই মবিনুর রহমান হামলার সত্যতা স্বীকার করে জানান, নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে এ ধরণের বিরোধপূর্ণ অবস্থা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে গোটা এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে সোনা কাজী বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর বিরোধ নিয়েই এসব ঘটনা ঘটেছে। এখানে তিনি কিংবা তার লোকজনের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ ফিরোজ তার বিরুদ্ধে আনিত আব্দুল হালিমের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ