রাজশাহীর বাগমারায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত যুবকের পরিচয় মিলেছে। সে জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। তার নাম আনোয়ার হোসেন ওরফে নাইম। তার বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের উত্তর পারইল গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত লোকমান হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে আনোয়ার এলাকাছাড়া ছিল।
মঙ্গলবার দুপুরে ছবি দেখে আনোয়ারকে শনাক্ত করেন তার মা শুরুজ্জান বেওয়া ও ১৩ বছরের মেয়ে আসমা আক্তার। মান্দা থানার এসআই এমদাদুল হক এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষে থেকে মান্দা থানায় আনোয়ারের ছবি পাঠানো হয়। ওই ছবি নিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও প্রতিবেশীরা আনোয়ারকে শনাক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, আনোয়ারের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী অনেক আগেই তালাক নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। দ্বিতীয় স্ত্রী রিমা, সেও জেএমবির সঙ্গে জড়িত। সে ২ বছরের ছেলে সিয়ামকে নিয়ে বগুড়া কারাগারে আছে। চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল সে গ্রেফতার হয়।
গত ৩ এপ্রিল শেরপুরের জোয়ানপুর গ্রামে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে দুই জেএমবি সদস্য নিহত হওয়ার মামলায় রিমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এর পর থেকে সে বগুড়া কারাগারে আছে। (শেরপুর থানায় মামলা নং ৪, তারিখ ১৫/০৪/১৬)
এছাড়াও আনোয়ারের বড় ভাই ইউসুব আলী ও তার ছেলে খায়রুল ইসলামও বগুড়া কারাগারে আছে। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বগুড়া থানা পুলিশ তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। (বগুড়া সদর থানা মামলা নং ৬০, তারিক- ২১/১২/১৫ ইং)। ইউসুব আলী গ্রেফতার হওয়ার পর গত বছরের ২৬ নভেম্বর বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া মসজিদে বোমা হামলার মামলায় আদালতে জবানবন্দি দেয় বলেও জানান তিনি।
গনেশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হানিফ উদ্দিন মন্ডল বলেন, তার পরিবারের একজন সদস্য মাহাবুব হোসেন প্রথমে ফোন করে তাকে জানায়, আনোয়ার বাগমারায় ক্রসফায়ারে মারা গেছে। তার লাশ নিয়ে আসার কোন ব্যবস্থা করা যায় কি-না জানতে চায়। তার মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া যায় বাগমারায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত যুবক আনোয়ার।
তিনি আরও বলেন, আনোয়ারের বড়ভাই জেএমবির শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইয়ের সহযোগী ছিলেন। ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে রাজশাহীর বাগমারা ও নওগাঁর আত্রাই রানীনগরে বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে ইউসুব থাকতেন। তখন থেকেই তারা জেএমবির সঙ্গে জড়িত। ইউসুব ও তার ছেলে গ্রেফতার হওয়ার পর ইউসুবের আরেক ছেলে মেহেদি হাসান, ইউসুবের ভাই হায়দার আলী, দেলোয়ার হোসেন ও মোয়াজ্জেম হোসেন আত্মগোপন করে। তবে এর অনেক আগে থেকেই ইউসুবের আরেক ভাই আনোয়ার এলাকা ছাড়া। মাঝে মধ্যে আনোয়ার বাড়ি আসলেও ইউসুব গ্রেফতারের পর আর আসেনি।
উল্লেখ্য, গত রবিবার রাতে রাজশাহীর বাগমারায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আনোয়ার হোসেন। এ সময় ছয়জন পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১৩টি হাতবোমা, চারটি হাসুয়া, একটি চাপাতি, দুইটি ছোরা ও ১০টি জিহাদী বই উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ