মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাখাওয়াত হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় যশোরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা খুশি ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রাজেক আহমেদ বলেন, ''বাংলাদেশে রাজাকার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার দাবি ছিল আমাদের অন্যতম চাওয়া। সাখাওয়াতের মৃত্যুদণ্ডাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা যারপরনাই আনন্দিত।'' এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ''শেখ হাসিনার ওয়াদা ছিল জনগণ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় পাঠালে তিনি রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনবেন। তারই ধারাবাহিকতায় কুখ্যাত রাজাকার সাখাওয়াতের সাজা হলো। এতে আমরা খুশি।''
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, ''এ রায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ারই অংশ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বাম ও গণতান্ত্রিক দল এবং সাধারণ মানুষের আন্দোলনের ফসল। এ রায়ে জনগণের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে।'' তিনি বলেন, ''সাধারণ মানুষ চায় দেশের সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার হোক।''
গণজাগরণ মঞ্চ যশোরের আহবায়ক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা অ্যাড. কাজী আব্দুস শহিদ লাল বলেন, ''এ রায়ের মাধ্যমে কেশবপুর তথা যশোরবাসী কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।''
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ''আমাদের প্রত্যাশা ছিল বিচার প্রক্রিয়াটি আন্তর্জাতিকমানের ও নিরপেক্ষ হবে। ফলে আদালতের দেয়া এ রায়ের ব্যাপারে আমাদের কোন মন্তব্য নেই।''
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী বলেন, ''মাওলানা সাখাওয়াত এক সময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। পরে তাকে দল থেকে বের করে দেয়া হয়। তিনি আমাদের কেউই নন। তবে আদালতের দেয়া রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।''
জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু বলেন, ''ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, গণজাগরণ মঞ্চসহ সংস্কৃতিমনা সকলের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সফলতা এ রায়। আদালত সাখাওয়াতের অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন বলে আমি মনে করি।''
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, ''স্বাধীনতা বিরোধীরা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে এদেশকে তাদের স্বর্গরাজ্য বানাবে বলে আশা করেছিল। কিন্তু এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, ব্যক্তি মুজিবকে হত্যা করা গেলেও তার আদর্শকে হত্যা করা যায়নি। এ রায়ে আমরা অত্যন্ত খুশি। জেলা ছাত্রলীগ আনন্দ মিছিল করতে চেয়েছিল কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে ঘরোয়া পরিবেশে মিষ্টিমুখ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কেশবপুরের বাসিন্দা ও যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর রফিকুল ইসলাম পিটু। তিনি বলেন, ''এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সাখাওয়াতের বিচার। ওই এলাকার নাগরিক হিসেবে এ রায়ে আমি অত্যন্ত খুশি। আমি মনে করি, এলাকার সাধারণ মানুষ সঠিক বিচার পেয়েছে। স্বাধীনতাকামীরা আশা করেছিলেন, সাখাওয়াতের সাজার মাধ্যমে জাতি কালিমামুক্ত হবে। তাদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।''
প্রসঙ্গত, বুধবার চেযারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাখাওয়াত হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৭ জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।
বিডি-প্রতিদিন/১০ আগস্ট, ২০১৬/মাহবুব