তেঁতুলিয়ার ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বরাদ্ধকৃত অধিকাংশ জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা জোর করে দখল করে রেখেছেন। এর মধ্যে ২৮ বছরেও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমি বুঝে পাননি কয়েকজন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু মুক্তিযোদ্ধাকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হলেও প্রভাবশালীরা দখল না ছাড়ায় মুক্তিযোদ্ধারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। বরাদ্দকৃত কাগজই তাদের সম্বল। এই কাগজ নিয়েই জমি পাবার আশায় তারা ছুটে বেড়াচ্ছেন অফিসে আদালতে।
ভূমিহীন এই মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এ উপজেলার প্রায় ১৫ জন ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধার নামে সরকার খাস খতিয়ান-এক এর অন্তর্ভুক্ত প্রায় ১০ একর ২৩ শতক জমি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রদান করে। জমি বন্দোবস্তের ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও কোন মুক্তিযোদ্ধাই এখনো তাদের জমি দখলে নিতে পারেন নি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অনুরোধে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু মুক্তিযোদ্ধাকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হলেও আবার দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।
মুক্তিযোদ্ধা তমিজউদ্দিন জানান, গত বছর গুয়াবাড়ি এলাকার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রশাসন ব্যার্থ হয়ে যায়। দখলকারীরা পুলিশ, তহশিলদারসহ প্রভাবশালীদের অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে।
জমির স্বত্ব বুঝে পাবার জন্য ২০১৫ সালে পঞ্চগড় জজ আদালতে মামলাও করেছেন চার মুক্তিযোদ্ধা। নিজেদের পক্ষে রায়ও পেয়েছেন তারা। এই মামলার বাদী খালপাড়া গ্রামের জালালউদ্দিন ও মোহাম্মদ আলী জানান, ২৮ বছর আগে সরকার আমাদের নামে ৬৬ শতক জমি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দিয়েছেন। এ জন্য জমির খাজনা পরিশোধ করেছি । খারিজ করেছি। কিন্তু জমি দখল করতে পারছিনা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, জমির কাগজ পত্র নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি, কোর্ট থেকে রায়ও পেয়েছি । কিন্তু জমি বুঝে পাচ্ছিনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেনা।
মুল্লুক চাঁদ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জয়নউদ্দিন জানান, ৫ শতক জমির উপর ভিটেবাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই আমার। ছেলেমেয়ে নিয়ে কোন রকমে মাথা গুজে আছি। সরকার আমার নামে ৩০ শতক জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দিয়েছে। কাগজ পেয়েছি কিন্তু জমি পাচ্ছিনা। কারণ দখলকারীরা খুব প্রভাবশালী। মুক্তিযোদ্ধা হয়ে আমিতো আর লাঠি হাতে নিতে পারিনা। তাই জমিও পাচ্ছিনা। এ ব্যাপারে প্রশাসনও কোন উদ্যোগ নিচ্ছেনা।
দর্জিপাড়া গ্রামের বেলাল হোসেন জানান, ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সরকার ২০০৩ সালে আমার নামে এক একর খাস খতিয়ানের জমি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়। সেই জমি দখল করে আছে সাহেব আলী এবং তছিরউদ্দিন। তারা জমি ছাড়েনা। উল্টো তারা বলে আমার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাতিল করে তারা নিজেদের নামে পত্তন করে নেবে।
এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভূমিহীন এসব মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বরাদ্দকৃত জমিগুলো কিছু টাউট বাটপার দখল করে রেখেছে। এসব জমি পেতে হলে প্রশাসনিক উদ্যোগ জরুরী। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক অমলকৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
বিডি প্রতিদিন/৯ নভেম্বর ২০১৬/হিমেল