মিয়ানমারের আরকান প্রদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে বাংলাদেশের সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না । ইতিমধ্যে টেকনাফ-কক্সবাজার সীমান্তের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে রোহিঙ্গারা। সীমান্তে বিজিবি টহল বাড়ানো হলেও রাত্রের অন্ধকারে অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তে জনসচেতনামুলক কার্যক্রম পরিচালন করেও ঠেকানো যাচ্ছে না অনুপ্রবেশ।
মওলানা আব্দুল গনি নামের এক রোহিঙ্গা জানান, তিনি গত ২৫ বছর ধরে ইমামতি করে আসছিলেন মিয়ানমার মংডু কেয়ারীপ্রাং জামে মসজিদে। গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মংডু এলাকার উত্তরাংশে বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৩টি ক্যাম্পে স্বশস্ত্র হামলায় ৯ বিজিপি সদস্য নিহত হওয়া এবং ১০ হাজারেরও অধিক গুলি লুটের ঘটনায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয় মসজিদের মেহরাব ও পবিত্র কোরআন শরীফ। এরপর আর সেখানে নামাজ পড়ানো সম্ভব হয়নি। তাই নিরাপত্তা সংকটে পরিবারের মোট ২৭ জন সদস্য নিয়ে পাড়ি জমায় বাংলাদেশে। ২০ নভেম্বর ভোরে টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্ত পার হয়ে আশ্রয় নেন লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাস্পে। এভাবে প্রতিনিয়ত আসতে শুরু করেছে রোহিঙ্গা।
ওই ঘটনার জের ধরে শুরু হয় রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর ব্যাপক ধর পাকড়। সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের খোঁজেঁ চালানো হয় সেনা অভিযান। হেলিকপ্টার থেকে গান পাউডার ছিটিয়ে পোড়ানো হয় বেশ কিছু বাড়ীঘর। মিয়ানমার সরকার তাদের অভিযানে এ পর্যন্ত ৬৯ জন রোহিঙ্গা মুসলিম মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তবে বিদেশি গণমাধ্যমে এর ভয়াবহতা ব্যাপক বলে উল্লেখ করা হয়। ইতিমধ্যে রাতের আধারে শত শত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করেছে। এ দিকে মিয়ানমারে এ ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে জোরদার করা হয়েছে সীমান্ত নিরাপত্তা।
কোস্টগার্ড ও বিজিবি নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সীমান্তে অতিরিক্ত টহল বাড়ানো হয়েছে। টেকনাফ সীমান্তে কয়েক দিনে ৬টি পয়েন্ট থেকে প্রায় ৮ শতাধিকের মত রোহিঙ্গা এবং নাফ নদী থেকে ২০টি নৌকা বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ঠেকিয়ে দিয়েছে বিজিবি ও কোষ্টগার্ড। এরপরও সীমানা পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা বাড়ছে রোহিঙ্গাদের।
উল্লেখ্য ২০১২ সালের জুনে মিয়ানমারে সহিংসতায় একদিনে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছিলা। এভাবে বিভিন্ন সময়ে আসা প্রায় ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। যার মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজারের মতো রোহিঙ্গা মুসলিম টেকনাফ ও উখিয়ার দুটি ক্যাম্পে শরনার্থী হিসেবে রয়েছে ১৯৯১ সাল থেকে। এ দিকে মিয়ানমারে ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বানিজ্য যাতায়াত। ১ দিনের ট্রানজিট যাতায়াতও বন্ধ রয়েছে। ঘটনার ১ সপ্তাহ পর কয়েক দিন চালু হলেও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তা আবার বন্ধ করে দেয়। তবে ২৩ নভেম্বর কক্সবাজারে বিজিবি ও বিজিপি’র মধ্যে পতাকা বৈঠকের কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিডি প্রতিদিন/২২ নভেম্বর ২০১৬/হিমেল