রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানার জঞ্জালের কারণে নৌ-পরিবহন চলাচল হুমকির মুখে পরেছে। নৌচলাচল, যাতায়াত ও পরিবহন সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। ফলে পাহাড়ে বসবাসরত হাজারো মানুষের জীবনে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। হ্রদজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কচুরিপানার জন্য নদীপথে লঞ্চ চলাচল মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এখন কাপ্তাই হ্রদ কচুরিপানার দখলে। অপসারণের নেই কোন ঊদ্যোগ।
সংশ্লিষ্ট তথ্য সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানায় জঞ্জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে বিভিন্ন নৌপথ। রাঙামাটি শহর ঘিরে থাকা কাপ্তাই হ্রদের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এখন কচুরিপানার স্তূপ। সীমান্ত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কচুরিপানা এসে হ্রদে একাকার হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে কাপ্তাই হ্রদের বিশাল এলাকা কচুরিপানার জঞ্জালে আবদ্ধ হয়ে পুরোপুরি অচল হয়ে গেছে রাঙামাটি ফিসারি বাঁধ, তবলছড়ি, বরকল, লংগদু, কাপ্তাই জেটিঘাট ও কাপ্তাই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। তাছাড়া কচুরিপানার কারণে অসহায় জেলেদের হ্রদে মৎস্য শিকারও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কচুরিপানার কারণে কাপ্তাই হ্রদ থেকে মাছ আহরণে প্রতিদিন জেলেদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। পাশাপাশি আহরিত মাছ নিয়ে নৌকায় অবতারণ (ল্যান্ডিং) ঘাটে আসতেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কারণ কচুরিপানার কারণে ইঞ্জিনচালিত নৌকার পাখা আটকে যায়। আর এ জট সরাতে প্রতিদিনই তাদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ে মাছ নিয়ে ঘাটে পৌঁছাতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় ব্যবসায়ীদের।
রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতি, সভাপতি মো.মঈনু উদ্দীন সেলিম জানান, রাঙামাটি জেলার ৬টি উপজেলা বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, লংগদু, বাঘাইছড়ি ও নানিয়ারচরে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। কচুরিপানার জঞ্জালের জন্য যাতায়ত ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এসব উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানা অপসারণের দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
অন্যদিকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ রাঙামাটি কচুরিপানা অপসারণের জন্য পাইল্ট প্রকল্প গ্রহণ করলেও তা কাজে কলমে। বাস্তবায়নের রূপ পাইনি।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জাকির হোসেন চৌধূরী জানান, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের জন্য বিরাট সমস্যা কচুরিপানা। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ যে পাইল্ট প্রকল্প গ্রহণ করেছিল তা অর্থ সংকুলানের জন্য হয়নি। কারণ একটা জেলা পরিষদের একার পক্ষে সম্ভব না। এটার জন্য যৌথ কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও চন্দ্রঘোনা পেপার মিলেও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
অভিযোগ উঠেছে, দেশের বৃহত্তম কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য বিড়ম্বনার অপর নাম কচুরিপানা। স্থানীয়দের সঙ্গে বিপাকে পড়ছে হ্রদে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরাও। কচুরিপানার জঞ্জালের কারণে কাপ্তাই হ্রদ তীরবর্তী উপজেলাগুলোতে রাঙামাটির সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগ বন্ধ হ হয়ে যেতে পারে বলে অাশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া মারাত্মক দূষণের শিকার কাপ্তাই হ্রদের পানিও।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ