চার মাস আগে দিনাজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে বাড়ছে ক্ষোভ। আহবায়ক কমিটির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকায় বাগবিতণ্ডা নিরসনে এবং আহবায়ক কমিটিতে সদস্য বাড়ানোতেই বেশী সময় পার হওয়ায় সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হচ্ছে বলে নেতাকর্মীরা জানায়।
তবে কেন্দ্র থেকে জেলা কমিটি চাপিয়ে দিলে দিনাজপুরে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারন করতে পারে বলে অনেক নেতাকর্মী মনে করেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চায় জেলা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি কমিটি হউক। এরই মধ্যে অনেক নেতাই তাদের নিজ নিজ পদের সমর্থনে চেষ্টা, তদবির ও গ্রুপিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি না থাকায় অনেক নেতাকর্মী বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে যান না বা দলীয় কর্মসূচিতেও অংশ নেন না। বর্তমানে বিএনপি এবং তার অঙ্গ সংগঠনগুলোয় মতবিরোধ তীব্রতর হয়ে উঠেছে। বিএনপি কার্যালয়েও আগের মতো নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায় না।
হামলা-মামলার জালে আটকেপড়া জেলা বিএনপিকে শক্তিশালী করতে গত বছরের আগস্টে পুনর্গঠনে হাত দেওয়া হলেও এখনো আশার আলো জ্বলে উঠেনি। অপরদিকে গত আগস্টে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে শুরু হয় গ্রুপিং-লবিং। নেতা-কর্মীর চাপে কয়েক ধাপে শুধু আহবায়ক কমিটির পরিধি বাড়লেও তেমন দৃশ্যমান কার্যক্রম দেখা যায়নি বলে তৃণমুল নেতাকর্মীরা জানায়। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি বর্তমানে ১২৯ সদস্যে দাড়িয়েছে। আগামী কয়েকদিন পরে আহবায়ক কমিটিতে আরও সদস্য বাড়াবে বলে কয়েক নেতা জানান। তবে পূর্বের মূল কমিটির সদস্যের চেয়ে আহবায়ক কমিটির আকার বড় হওয়াটা কামনা করেন না অনেক নেতাকর্মী। আবার অনেকে এই আহবায়ক কমিটিকে ছোট করতে বলছেন।
কয়েকজন নেতা জানান, এখনও জেলা বিএনপির ১৩টি উপজেলা ও ৯টি পৌর ইউনিটের একটিরও কমিটি গঠন হয়নি। তার আগে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, তা নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা।
এদিকে, তৃণমূল নেতাকর্মীরা চায়, ত্যাগী, যোগ্য ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব। তাদের মতে, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ত্যাগী নেতা নির্বাচন করা হলে দল সাংগঠনিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
যুবদল নেতা আমিনুল ইসলাম মুন্না জানান, বর্তমান দলের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দলকে সুসংগঠিত করতে তৃণমূলের মতামতে সাহসী, নিষ্ঠাবান ও গ্রহণযোগ্য নেতা নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
এ অবস্থাতেও আগামী জেলা বিএনপির কমিটিতে সভাপতি পদে যাদের নাম আলোচনায় এসেছে তারা হলেন, বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক এমপি এজেডএম রেজওয়ানুল হক, বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক ও সাবেক এমপি আখতারুজ্জামান মিয়া, বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক সভাপতি মোঃ লুৎফর রহমান মিন্টু।
অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন, বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন, বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান উজ্জল, বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও তরুণ স্বেচ্ছাসেবক দলের দিনাজপুর শহর কমিটির আহ্বায়ক বখতিয়ার আহম্মেদ কচি প্রমুখ। আর সাংগঠনিক পদে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক যুবদল নেতা আমিনুল ইসলাম মুন্না প্রমুখ।
সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন জানান, জেলা কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতেই একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলেই বিএনপি শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান উজ্জল জানায়, মতভেদ দূর করে তৃণমুলের মতামতের ভিত্তিতে চলমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে একমাত্র সাহসী ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বই বিএনপিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারে।
দলের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আখতারুজ্জামান মিয়া জানান, আগামী ২৫ জানুয়ারী আহবায়ক কমিটির সভা আছে। সভায় বর্তমান ১২৯ কমিটির স্থলে ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করতে যোগ্যতার ভিত্তিতে আরও সদস্য সংযুক্ত করে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হবে। অনুমোদন হয়ে এলে বিভিন্ন উপজেলাসহ বিভিন্ন কমিটি গঠন ও জেলা সম্মেলনের ব্যাপারে কাজ শুরু হবে।
বিডি প্রতিদিন/২১ জানুয়ারি ২০১৭/হিমেল