চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে আবাদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে পুরোদমে সেচ। মাঠে মাঠে সবুজের সমারোহ দেখা গেলেও কোথাও কোথাও পানির অভাবে চারা গাছে দেখা দিয়েছে বিবর্ণ রঙ। একরের পর একর জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। কৃষকের মাথায় পড়েছে হাত।
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার লুনেস্বর, বানিয়াজানসহ বেশকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, কৃষকদের চরম দুর্ভোগ। দূর থেকে বালতি করে পানি এনে সেচ কার্য চালাতে দেখা গেছে অনেককে। আবার কোথাও কোথাও পুরনো দিনের চাওগাছের তৈরি খুন্দ (আঞ্চলিক ভাষায় কুন) দিয়ে চালাচ্ছেন সেচ কার্য।
নদী থেকে দূরে অবস্থিত হওয়ায় কিংবা নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা রয়েছেন দুর্ভোগে। বেশি দুর্ভোগে উপজেলার দেওগাও, লক্ষিপুর, সজনার বিলসহ বেশ কিছু গ্রাম।
দেওগাও গ্রামের কৃষক রুহুল আমীন, আব্দুর কাদির জানান, বিদ্যুতবিভ্রাটের কারণে চাষীরা হিমশিম খাচ্ছেন সেচ দিতে। অনেক সময় একেবারেই বিদ্যুৎ থাকে না।
বানিয়াজান গ্রামের মফিজুর ইসলামসহ অনেকে অভিযোগ করছেন, বিদ্যুতের অনিয়মিত সরবরাহের কারণে মর্টারসহ সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় সারা দিনেও বিদ্যুৎ থাকেনা। আবার রাতেও দুই থেকে তিন ঘন্টার বেশি পাওয়া যায় না। অথচ প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ ঘন্টা পানি সরবারাহ প্রয়োজন।
এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে কৃষি বিভাগও আশঙ্কা করছে এবার ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হয়তো ছাড়াতে পারবে না। সেচের অভাবে অনেক জমি অনাবাদিও রয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান জানান, এবার উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৯৩৫ হেক্টর। এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে।
পল্লীবিদ্যুতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাকিব উদ্দিন বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, 'আমরা দিনে তেমনভাবে দিতে না পারলেও রাতে বিদ্যুৎ দেয়ার চেষ্টা করেছি। পুরো জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৫২ মেগাওয়াট থাকলেও পুরো জেলাতেই মাত্র বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ মেগাওয়াট।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা হেলেনা পারভীন জানান, তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রয়োজনে যে জমিগুলোতে সেচ মোটামুটি শেষের পর্যায়ে সেখান থেকে বন্ধ করে হলেও বাকিগুলোতে দেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭/ফারজানা