পাবনার সুজানগর উপজেলার দুলাই ও আহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৫টি গ্রামে সোমবার রাতে আকস্মিক টর্নেডোর আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। টর্নেডোতে ওইসব গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এতে নারী ও শিশুসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় ওই এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে প্রায় ৩০ গ্রামের বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অসংখ্য গাছপালা ও হাজার হাজার মন পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আজ সকালে পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু, সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য সহযোগিতা করেন। তাৎক্ষনিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা সম্ভব না হলেও কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তারা। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে এক হাজার ও ৩০ কেজি চাউল দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। ওই বিভিন্ন গাছপালা উপড়ে পড়া এবং পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জরুরি ভাবে ওই এলাকায় চিকিৎসার জন্যে স্বাস্থ্য ক্যাম্প স্থাপণ ও আর্থিক সাহায্যের জন্যে আনুদানের ক্যাম্প খোলা হয়েছে। টর্নেডোয় আহতদের স্থানীয়রা রাতেই উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহমেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার চর গোবিন্দপুর ধোপপাড়ায় প্রায় আড়াই শত বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংষস্তুপে পরিণত হয়েছে। ঘটনার পরপরই আমি এলাকায় গিয়ে তাদের চিকিৎসার জন্যে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করি। আড়াইশত পরিবার খোলা আকাশের নীচে অবস্থান করছেন। দ্রুত তাদের টীনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি নিজে সকালে খিচুরী রান্না করে মসজিদে রেখে সবার খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। সত্যিই আমার জীবনে এই ধরনের দুর্যোগ দেখি নি।
এ ব্যাপারে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ ঘটনার খবর পেয়ে সকালেই আমরা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ এক হাজার টাকা ও ৩০ কেজি চাউল দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই টিনের বরাদ্দ পাওয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মৌখিক ভাবে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা হচ্ছে।
পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, টর্নেডোর আঘাতে বিদ্যুৎ বিভাগের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, সোমবার রাতের টর্নেডোর আঘাতে সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় তিন শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষে থেকে প্রতিটি পরিবারকে তিরিশ কেজি চাল, নগদ এক হাজার টাকা ও দুটি করে কম্বল প্রদান করছি।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসা পাবনা-২ এলাকার সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু বলেন, সত্যিই আমি হতবাক হয়েছি ক্ষয় ক্ষতি দেখে। একটি গ্রামের সকল বাড়ির ঘরই ওড়ে গেছে। ইতিমধ্যেই উপজেলা প্রশাসনকে তালিকা প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে। আমি নিজেও ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি। শুধু সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ, দুলাই, চরগোবিন্দপুর ও চরদুলাই নয় পাশের উপজেলা সাথিয়ার বনগ্রাম রসুলপুর মোল্লাপাড়া, মিয়াপুর হাজিপাড়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এক কথায় পাবনায় প্রায় ৫শতাধিক বাড়ি ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার