আজ মহান মে দিবস। দিনটি শ্রমিকদের ঘাম, রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে অর্জিত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮০টি দেশ দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করছে। সকল শ্রমিকদের আজ ছুটি। কিন্তু চাকুরি হারানোর ভয়ে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে শতাধিক শ্রমিক ছুটি ভোগ করতে পারেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে মোরেলগঞ্জ-শরণখোলার ৩৫/১ নং পোল্ডারের উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প, ফেজ-১ এ কাজ করছেন এই শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের অভিযোগ, ছুটি চাওয়ায় কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘কাজে না আসলে চাকুরি থাকবে না’। তাই চাকুরি হারানোর ভয়ে আজ ১ মে সোমবার সকাল ৭টায় বেড়িবাঁধের কাজে যোগ দিয়েছেন তারা। অন্যান্য দিনের মতো কাজ চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপকূলীয় বাঁধের কাজ চলছে পুরোদমে। শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। কয়েকজন ডাম্পিং ড্রাইভার, স্ক্যাবেটর, বুলডোজার, মাহেন্দ্র ড্রাইভার ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘আমরা মে দিবস উপলক্ষে ছুটি চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। ছুটি নিলে চাকুরি থেকে আমাদেরকে বরখাস্ত করার হুমকি দিয়েছে। তাই কাজ করছি।'
গোটা কাজের তদারকি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দি ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো অফ হ্যানান ওয়াটার কনজার্ভেন্স, চায়না (সি এইচ ডব্লিউ ই)। ঠিকাদারি ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও পোল্ডার ৩৫/১এর ম্যানেজার লিউ টাইলিং বলেন,‘শ্রমিকদের ইচ্ছার ওপরে কাজ চলছে। আজ ১লা মে তারা সকলে দ্বিগুন বেতন পাবে’। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস উপলক্ষে কেন কর্ম এলাকা বন্ধ রাখা হয়নি জানতে চাইলে লিউ বলেন, ‘ওয়াবদা থেকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য চাপ আছে। বৃষ্টি শুরু হলে কাজ বন্ধ থাকে। তাই যারা ইচ্ছুক তাদেরকে নিয়েই কাজ চালু রাখা হয়েছে’।
এ সম্পর্কে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শ্রমিকদের সম্মানে এই দিনে কোথাও কাজ চলার কথা নয়। আজ শ্রমিকদের ছুটির দিন। প্রাইভেট ওই প্রতিষ্ঠানটি কেন শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়েছে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ৩৫/১ পোল্ডারে ৬৩কি.মি. বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ, ৭০কি. মি. খাল পুনঃখনন, ১৫টি নিষ্কাসন ও ১৭ ফ্লাসিং স্লুইস গেট নির্মান, এক কি.মি. নদী ভাঙন রক্ষার কাজ রয়েছে। যার চুক্তি মূল্য ৬ হাজার ৯৬৯ মিলিয়ন টাকা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এই কাজ বাস্তবায়ন করছে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, এখানে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১ঘন্টা ডিউটি করানো হয়। এর মধ্যে একঘন্টা খাবার বিরতি ও একঘন্টা ওভারটাইম। বাকি ৯ ঘন্টা ধরা হয় বেসিক ডিউটি যা শ্রম আইনের পরিপন্থি। শ্রমিকদের বেতনও যথা সময়ে দেওয়া হয় না। শ্রমিকরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ