রুমানা, হ্যাপী, রূপালী, সুমন, সওকত, নিশাত, মোক্তারা, কামরুন্নাহার ও মিজান এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এরা সবাই দরিদ্র ঘরের সন্তান। এদের কারো বাবা ভ্যান চালক, কেউ রিক্সা চালক আবার কেউ দিন মজুরের কাজ করেন। তাদের ভিটে-বাড়ি ছাড়া কোন সম্বল বা সম্পদ নেই।
এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফল ভালো হলেও সামনে কি হবে এমন চিন্তার ছায়া এসব মেধাবীদের চোখে মুখে। উচ্চ শিক্ষার খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে তাদের অভিভাবকরাও। কিন্তু লক্ষ্য একটাই পড়াশুনা করে সফল হওয়া।
এরা সমাজের আর দশ জন ছেলে মেয়ের মতোই রক্ত মাংসের মানুষ। পার্থক্য শুধু এরা পেটে ক্ষধা নিয়ে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম করেছে। এরা দারিদ্র্যতার সাথে যুদ্ধই নয় পরিবারের দায়িত্বও পালন করেছে যথারীতি।
সুবিধা বঞ্চিত এসব হত-দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে, জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের নন্নী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে নন্নী ইউনিয়নের আমলাতলি গ্রামের দিন মজুর রমজান আলীর কন্যা রুমানা (গোল্ডেন জিপিএ), নন্নী বাজারের ফুটপাতের ফল ব্যবসায়ী হযরত আলীর কন্যা হাফিজা আক্তার হ্যাপি (গোল্ডেন জিপিএ), বাইগড়পাড়া গ্রামের দিন মজুর রফিকুল ইসলামের কন্যা রূপালী খাতুন (গোল্ডেন জিপিএ), ছাইছাকুড়া গ্রামের গার্মেন্টস কর্মী মজিবুর রহমানের ছেলে মো. সুমন মিয়া, পোড়াগাও ইউনিয়নের শেকেরকূড়া গ্রামের মুদি দোকানদার মো. নূর হোসেনের ছেলে শওকত হোসাইন, একই ইউনিয়নের ধোপাকূড়া গ্রামের রিক্সা চালক হযরত আলীর পুত্র মোঃ মিজানুর রহমান পলাশীকুড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
শ্রীবরর্দী উপজেলার খড়িয়া কাজির চর ইউনিয়নের কাজির চর গ্রামের সিএনজি চালক দুলাল মিয়ার কন্যা নাছরিন আক্তার নিশাত বাজিতখিলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবং ঝিনাইগাতি উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামের দিন মজুর মকুবল হোসেনের কন্যা মোক্তারা পারভীন (গোল্ডেন জিপিএ) এবং তার আপন ভাগ্নি একই গ্রামের রিক্সাচালক আব্দুল কুদ্দুসের কন্যা কামরুন্নাহার মালিাঝিকান্দা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ (গোল্ডেন জিপিএ) পেয়েছে।
এসব দরিদ্র মানুষের সন্তানদের ফলাফল দেখে এলাকাবাসীও খুশি হয়ে বলেছেন, এত কষ্টের মধ্যে তারা জয় করে দেখিয়ে দিয়েছে ভাল করতে চাইলে স্বচ্ছলতাই পড়াশুনার মূখ্য বিষয় নয়।
প্রায় পুষ্টিহীন ওইসব মেধাবী শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে এখন নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে যাত্রার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে। ফলাফল ভালো করে সবাই খুশি হয়, কিন্তু চিন্তা তাদের পিছু ছাড়ছে না। ভালো কলেজে ভর্তি, পড়াশোনার খরচ ইত্যাদি নিয়ে চিন্তিত শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা।
বিডি প্রতিদিন/৬ মে ২০১৭/হিমেল