বিড়ি শ্রমিকের সন্তান শফিকুল ইসলাম। খুব বেশি তিনি লেখাপড়ার স্বপ্ন দেখার সাহস করতে পারেন। আর ভাগ্য সহায় থাকলে বড়জোর একটা ছা-পোষা কেরাণীর চাকরি। কিন্তু অভাবের সংসারে এ সামান্য চাওয়াও তো স্বপ্নই। পড়াশোনার সুযোগ পেলেও ট্রাকের হেলপারি করে পেট চালাতেন শফিকুল। কিন্তু শত প্রতিকূলতাকে যে গুটিকয়েক মানুষ অনুকূলে আনতে পারেন, তাদের আটকায় সাধ্য কার? আটকাননি তাই শফিকুলও। সবাইকে অবাক করে দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করলেন। তিনি ৩৫তম বিসিএস এর শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা সদরে তার বাসবাস। বাবা আব্দুল খালেক বিড়ি কারখানায় কাজ করেন। মা গৃহিণী। সাত সদস্যের সংসারে দারুণ অভাব। এখন তার মানিকের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন বাবা আব্দুল খালেক।
২০০৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে সংসারের হাল ধরেন শফিকুল। পড়ার খরচ জোগাতে কাঠমিস্ত্রির জোগালী হয়েছেন। দিনে ৩০ টাকা মজুরিতে কাজ করতেন। দিনে ১০ টাকা মজুরিতে ব্যানার-ফেস্টুন লেখারও কাজ করেছেন। ট্রাকের হেলপারিও করেন তিনি। এভাবেই নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে চমকে দেন।
এরপর পার্বতীপুরের খোলাহাট ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সুযোগ মেলে।
৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে এখন তিনি লালমনিরহাট সরকারি মজিদা খাতুন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
ভবিষ্যতের জন্য আরো স্বপ্ন জমিয়ে রেখেছেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে বাবা-মায়ের থাকার ঘরটির মেরামতের কাজ করাবো। বাবা-মায়ের নামে একটি দ্রাতব্য প্রতিষ্ঠান চালুর স্বপ্ন আছে আমার। তবে এক সময় আমি অবশ্যই আমার মতো অভাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করতে চাই। টাকা-পয়সার অভাবে কারও পড়ালেখা যেন থমকে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে চাই আমি।
বিডি প্রতিদিন/ ০৬ মে ২০১৭/আরাফাত